ইসলামের দৃষ্টিতে সফলতা অর্জন- ফেরদৌস আলম
- আপডেট সময়- ০৪:৫৭:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৫২ বার পড়া হয়েছে
মানব সমাজে এমন কেউ নেই, যে তাঁর জীবনে সফলতা অর্জন করতে চায় না। যদি প্রশ্ন করা হয় আপনি আপনার সফলতাটা কীভাবে অর্জন করতে চান? কিংবা আপনি কোন কোন কাজ করতে পারলে নিজেকে সফল ভাববেন? উত্তর কি আদৌ আপনি দিতে পারবেন?
আসলে সফলতার কোন শেষ নেই। সফলতা এরকম কোনো নির্দিষ্ট বস্তু নয় যে আমরা তা একবার অর্জন করলেই সারা জীবন সফল হব।
তবুও এমন প্রশ্ন আসলে অতি সহজ কথায় এর উত্তর হবে এমন- যখন আপনি নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট তখনই আপনি সফল। এক কথায় এর থেকে সুন্দর উত্তর আর হয় না। মূলত জীবনের প্রতি পদক্ষেপে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারার নামই সফলতা।
এ সফলতা আবার একজনের কাছে একেক রকম যেমন কেউ চায় বিপুল অর্থ সম্পদ, কেউ চায় নাম-যশ-খ্যাতি, কেউবা বাড়ি গাড়ি, কেউবা আবার চায় একটুখানি সুখ। এ কথা সত্য যে, প্রয়োজনীয় ব্যাংক-ব্যালান্স, মনমাতানো একটা বাড়ি,গাড়ি পাওয়ার পরেও আবার কেউ বলে না সে সফল।
যদি একজন ধনী মানুষকে যদি জিজ্ঞেস করেন- আপনার তো ৩/৪ ফ্যাক্টরি আছে। দেশের বড় ব্যবসায়ী হিসেবে অনেক নাম খ্যাতিও আছে। ছেলে-মেয়েরাও প্রতিষ্ঠিত ও সরকারি চাকরিজীবী। তাহলে তো আপনি এখন সফল ব্যক্তি হিসেবে জীবন উপভোগ করবেন?
এটা শোনার পর তিনি বলবেন- কি যে বলেন। ব্যবসায় এখন খুব মন্দা যাচ্ছে। করোনা এসে ব্যবসাটার অবস্থা বাজে করে দিয়েছে, খুব একটা লাভ আসতেছে না। আবার কোম্পানি শেয়ারের অবস্থাও ভালো না।
আবার যদি একজন মধ্যবিত্তের জীবন লক্ষ্য করা হয় সেখানে দেখা যাবে। একটা বাড়ি, মোটা অংকের কিছু অর্থের সঞ্চয়, নিশ্চিত ইনকামের জন্য কোনো পথ এবং ছেলে মেয়েদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে সে নিজেকে সফল ভাববে। আসলে এসব কিছু পূরণ হলেই তিনি কি নিজেকে সফল ভাবেন?
এটার ও উত্তর আসবে- না। দেখা যাবে তিনি একটি বাড়ি বানানোর পর দ্বিতীয় বাড়ি বানানোর চেষ্টা করবেন। মোটামুটি কিছু সঞ্চয় হলে ব্যাংক ব্যালান্স দ্বিগুণ করার চেষ্টায় নিজেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ব্যস্ত রাখেন।
এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে তাহলে মানবজীবনের সফলতা কী? সফলতা কিসে? কি করলে নিজেকে সফল ভাবা যাবে? কোন পথে তা অর্জন করতে হবে? এমন হাজারো সফলতার প্রশ্নে উত্তর একটাই আর তা হল- “মহান আল্লাহর পথ অনুসরণ করলেই কেবল সফল হতে পারবে”। আল্লাহর পথ অনুসরণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ব্যতীত সফলতা অর্জন অসম্ভব। কেননা, মানবজাতির জন্য দুনিয়া হচ্ছে আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। আর এ শস্যক্ষেত্রে শুধুমাত্র ধন সম্পদ কিংবা বাড়ি,গাড়ি, নাম-ধাম অর্জন কখনো সফলতা হতে পারে না। সফলতা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে। আর এ সফলতা সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন –
“অবশ্যই মুমিনরা সফল হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়াবনত। আর যারা অনর্থক কথাকর্ম থেকে বিমুখ। আর যারা জাকাতের ক্ষেত্রে সক্রিয়। আর যারা তাদের নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজতকারী। (সুরা মুমিনুন, আয়াত:১-৫)”
আল্লাহর ভয় অর্জন করা হচ্ছে জীবনে সফলতা অর্জনের একটি অন্যতম মাধ্যম। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে চলে তিনি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতেই সফল ও সম্মানিত হয়। সবাই তাকে বিশ্বাস করে, ভালোবাসে। আল্লাহ বলেন-
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য সফলতার পথ তৈরি করে দেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তাঁর জন্য যথেষ্ট, আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। (সুরা তালাক, আয়াত:২-৩)”
এখন মানব মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে তাহলে কি আল্লাহর পথ অনুসরণ না করলে কখনো সফল হতে পারব না? উত্তরে একটা ইসলামি গল্প বলা যেতে পারে। গল্পটি এমন: দুজন ফেরেশতার মধ্যে আসমান থেকে একজন ফেরেশতা পৃথিবীতে আসছেন। অন্য একজন ফেরেশতা পৃথিবী থেকে আসমানের দিকে যাচ্ছেন। পথিমধ্যে ফেরেশতাদ্বয়ের দেখা হলে পৃথিবী থেকে আসমানে ফিরে যাওয়া ফেরেশতা প্রথম ফেরেশতাকে বললেন, কোথায় যাচ্ছ?
প্রথম ফেরেশতা উঃ দিলো- জনৈক মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা হলো তিনি দুধ খাবেন। মৃত্যুর আগে এটাই ছিল তার শেষ ইচ্ছা। মহান আল্লাহর নির্দেশ হলো তিনি যখন দুধ খাওয়ার জন্য দুধের বাটি মুখের কাছে নেবেন তখন আমি যেন তা ফেলে দিই। তিনি না খেয়েই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবেন।
এটা শোনার পর দ্বিতীয় ফেরেশতা বললো- আমি অন্য এক মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির কাছ থেকে ফিরলাম। সে ব্যক্তির জীবনে কোনো কিছুই অপূর্ণ নেই। সর্বশেষ সে রুই মাছ খেতে চেয়েছিল। তা খাওয়ার ব্যবস্থা করে ফিরলাম।
এখন বলেন তো এ দুই ব্যক্তির কে সফল?? উত্তর হয়তো দ্বিতীয় ব্যক্তি দিবেন কিন্তু আসলেই কি দ্বিতীয় ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে? তাহলে আসুন এবার জেনে নেই আসলে আল্লাহর পথ অনুসরণ করলে কিভাবে সফল হবেন।
গল্পে যে দুই ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে প্রথম যে ব্যক্তি দুধ খেতে চেয়েছিলেন তিনি বেহেশতে যাবেন। কারণ মহান আল্লাহ বেহেশতে তাকে দুধের চেয়েও বেশি কিছু দেবেন। এ কারণে তার শেষ ইচ্ছেকে অপূর্ণ রেখেছেন।
অন্যদিকে দ্বিতীয় যে ব্যক্তি রুই মাছ খেতে চেয়েছিল সে হবে জাহান্নামি। তাই দুনিয়াতে তার সব ইচ্ছে পূরণ করে দিয়েছেন।
এখানে বোঝার বিষয় হলো, আপনি মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা হলেও আপনার সবকিছুতে তিনি সফলতা দান নাও দিতে পারেন। তাই আপনি যে সব লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন তার জন্য আপনি কেবল চেষ্টা করতে পারেন। তার সফলতার মুখ দেখবে কি দেখবে না, তা নির্ধারণ করবে কেবল মহান আল্লাহপাক। আল্লাহ বলেন-
“আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পথ অনুসরণ করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই সফলকাম।(সুরা নুর, আয়াত: ৫২)”
সুতরাং আল্লাহর পথ অনুসরণেই হচ্ছে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার চূড়ান্ত পথ। জীবনে সফলতা অর্জন করার জন্য অবশ্যই আপনাকে ইসলামিক বিধিনিষেধ মানতে হবে। তবেই আপনি চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
মোঃ ফেরদৌস আলম
বি.এ, এম.এ(আরবি ভাষা ও সাহিত্য)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়