রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশা সহ আটক ২
- আপডেট সময়- ০১:৫১:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩ ৮৭ বার পড়া হয়েছে
বিশেষ প্রতিনিধি।।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহ এলাকাবাসীর ওপর হামলা এবং গুলিবর্ষণের ঘটনার মূলহোতা ৪০ মামলার আসামী শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া ওরফে মোশা (৪৭) সহ এক সহযোগীকে আটক করেছে র্যাব।
জানা গেছে আটককৃত অপর সহযোগীর নাম দেলোয়ার হোসেন (৫২)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যে বৃহস্পতিবার (১ জুন) ভোরে রূপগঞ্জের নাওড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগজিন ও ৪রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এর আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী থেকে ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও তার পাশ্ববর্তী এলাকায় হত্যা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জমি দখল, মাদক ব্যবসাসহ নানান ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে।
তথ্য মতে, এ নিয়ে ছয়বারের মতো গ্রেপ্তার হলেন এই দূর্ধর্ষ শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ ওরফে মোশা। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, মাদক ও চাঁদাবাজিসহ ৪০টির বেশি মামলা রয়েছে। তার সহযোগী দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধেও রূপগঞ্জ থানায় পাঁচটিরও অধিক মামলা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার(১জুন) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলন তিনি বলেন, গত ২৫ মে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে স্থানীয় জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা এবং গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ ২০/২৫ জন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনার পর রূপগঞ্জ থানায় বাদী হয়ে মামলা করে পুলিশ। মামলার সূত্রধরেই উক্ত আসামিদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে রূপগঞ্জ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় হত্যা, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানান ধরনের অপরাধমূলক সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। মোশারফের নেতৃত্বে ৭০/৮০ জন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অবৈধভাবে জমি দখল, হুমকি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন।
কেউ চাঁদা দিতে অশীকৃতি জানালে তাকে ভয় দেখানো হতো। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য ‘মোশা বাহিনী’ নামে একটি সন্ত্রাসী দল গড়ে তুলেন মোশারফ। এ ঘটনার পর তিনি কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে আত্মগোপনে চলে যান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, মোশারফ স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তার কোনো রাজনৈতিক দল নেই। তার পরিচয় তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী।
জানাগেছে, গত ২৫ মে (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া এলাকার চিনখলা গ্রামে মোশা বাহিনীর সঙ্গে গ্রামবাসীর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।এ সময় গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপরও চড়াও হয় মোশা বাহিনী।
একপর্যায়ে পুলিশ মোশাকে গ্রেপ্তার করার পর তার সহযোগীরা হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ ও গ্রামবাসীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়।তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত তিনজন। পরে অভিযান চালিয়ে ওই এলাকা থেকে মোশা বাহিনীর তিন নারী সদস্যসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রামবাসী ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে শুক্রবার (২৬ মে) শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন মোশাসহ তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। পুলিশ বাদী হয়ে একটি এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর পক্ষে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।
সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর আক্রমণের অভিযোগে মোশারফ হোসেন ওরফে মোশা ও তার বাহিনীর ২৪ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৭০/৮০ জনকে আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন থানার দায়িত্বরত এসআই আমিনুর রহমান।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আবু মিয়া, জায়েদা খাতুন, মারুফা খাতুন, আলো, আনোয়ার হোসেন ধলকু, বদিউজ্জামান বদি, সাখাওয়াত উল্লাহ, নীরব, স্বাধীন, নাজমুল, ওয়াসিম, রিফাত, রায়হান, দেলোয়ার, তাজেল, রুবেল, লিটন, আমির হামজা, জয়নাল, শাহাজালাল, নুর জাহান, সালেহা, আলী আজগর ও এমারত।