সর্বশেষঃ
ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব: কক্সবাজার আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে উপকূলের মানুষ
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৫:৫০:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ মে ২০২৩ ৯৬ বার পড়া হয়েছে
সমকালীন কাগজ রিপোর্ট।।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র গতি তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে বাড়ছে। ‘মোখা’র প্রভাব থেকে জানমাল রক্ষার্থে কক্সবাজার উপকূল এলাকার লোকজন দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন।
শনিবার(১৩ মে) সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার শহরের সাগর তীরবর্তী এলাকা সমিতি পাড়া থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। সেন্টমার্টিন থেকে পর্যটন ব্যবসায়ী ও কয়েক হাজার বাসিন্দা নিরাপদে টেকনাফে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিকেলের দিকে মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাতের ভয়ে আগে থেকেই সবাই নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন।
এবারও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে আগে থেকেই এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে। যেকোনো সময় ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানতে পারে। তাই প্রাণ বাঁচাতে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আগে থেকে চলে আসেছে।
সাগর তীরের এক বাসিন্দা সফুরা বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করে বলা হচ্ছিল আজ সন্ধ্যা থেকে ঘূর্ণিঝড় শুরু হতে পারে, তাই অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে আগে থেকে চলে আসলাম। ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে তাকে নিয়ে কোথায় যাবো। সে তো চলাফেরাও করতে পারে না।
সবকিছু নিয়ে প্রথমে ডিসির কার্যালয়ে চলে গিয়েছিলাম, পরে সেখান থেকে এখানে (প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে) গাড়ি নিয়ে পৌঁছাতে পারলাম। কক্সবাজার পৌরসভা থেকে পৌর প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নিরুপম বলেন, সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তিন শতাধিক লোকজন আশ্রয়ের জন্য চলে এসেছেন। তাদেরকে পৌরসভার পক্ষ থেকে শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় জেলার টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলাতে ৫৭৬টি নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।
উপকূল ও দুর্গত এলাকা থেকে লোকজনকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার জন্য অন্তত ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা প্রায় পাঁচ লাখ ছয় হাজার। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে।
দুর্যোগের প্রস্তুতির বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ৪৯০ মেট্রিক টন চাল, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির (সিপিপি) ৮ হাজার ৬০০ জন স্বেচ্ছাসেবী, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রোভার স্কাউট সদস্য, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও অন্তত দেড় হাজার সদস্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কাজ করছে। উদ্ধার তৎপরতায় নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের রেসকিউ টিম, রেসকিউ বোট, মেডিকেল টিম ও কমান্ডো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা যেহেতু কক্সবাজারের দিকে আঘাত হানার কথা বলা হচ্ছে, সেহেতু প্রস্তুতিও আগেভাগে নিতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।
এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে খোলা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মোবাইল নম্বর- ০১৮৭২৬১৫১৩২।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান বলেন, রোববার (১৪ মে) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। এ সময় ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে। সংকেত আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সেন্টমার্টিনের দুই দিক থেকে যেহেতু খোলা রয়েছে এবং পানি চলাচলের সুবিধা আছে, সেহেতু বড় ধরনের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ওই অঞ্চলে পানি জমে থাকবে না। আবহাওয়া অফিস থেকে প্রতি মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র সকল আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি থানায় আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। দুর্যোগকালীন লোকজনকে সহায়তা, সহযোগিতা এবং তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কাজ করছে পুলিশ। কারণ লোকজনকে সহযোগিতার মাধ্যমে মানবিকতার পরিচয় দিতে হবে।
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপের সব হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা যেহেতু কক্সবাজারমুখী, সেহেতু কক্সবাজারসহ সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঝুঁকিতে রয়েছে। এ জন্যই সেন্টমার্টিনের সব হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি সেন্টমার্টিন থেকে পর্যটন ব্যবসায়ী ও কয়েক হাজার বাসিন্দা নিরাপদে টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, দ্বীপে ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবকরা একযোগে কাজ করছেন।