বড়লেখা সীমান্ত এলাকায় বিজিবি’র অভিযানে ভারতীয় পণ্যসহ আটক-২

- আপডেট সময়- ০৪:১৪:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫ ৭৬ বার পড়া হয়েছে

তিমির বনিক,মৌলভীাজার প্রতিনিধি।।
মৌলভীবাজারের বড়লেখার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বড়াইল গ্রামের চিহ্নিত মানব পাচারকারীর বাড়িতে বৃহস্পতিবার (৩রা জুলাই) রাতে বিজিবি অভিযান চালিয়েছে। মানব পাচারকারী হোসেন আলীর মাধ্যমে ভারত থেকে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে বিজিবি।
এ সময় মানবপাচারকারী হোসেন আলী পালিয়ে যান। বিজিবি আটককৃতদের তল্লাশি চালিয়ে ভারতীয় সিমসহ দুটি মোবাইল ফোন ও ৫০০ রুপির ১৮টি নোটের ৯ হাজার ভারতীয় রুপি উদ্ধার এবং মানবপাচারের কাজে ব্যবহৃত দালাল হোসেন আলীর রেজিস্ট্রেশন বিহীন গ্লামার মোটরসাইকেলটি জব্দ করেছে।
এ ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার রাতেই বিজিবি লাতু বিওপির নায়েক আলমগীর হোসেন পলাতক দালাল হোসেন আলীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অবৈধ সীমান্ত অতিক্রম ও অভিবাসী আইনে থানায় মামলা করেছেন।
আটকরা হলেনÑ কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার চরিয়াকনা গ্রামের শংকর সূত্রধরের ছেলে টিটু সূত্রধর ও হরিধন সূত্রধরের ছেলে পিন্টু সূত্রধর। মানব পাচারকারী হোসেন আলী চুক্তির মাধ্যমে তাদের ভারতে পাঠিয়েছিল। তার মাধ্যমেই পুনরায় সীমান্ত অতিক্রম করে নিজ বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা হোসেন আলীর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।
হোসেন আলী সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজনকে বিরাট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিজের বাড়িতে রেখে ভারতীয় দালালদের মাধ্যমে সুবিধাজনক সময়ে সীমান্তের জিরো লাইন অতিক্রম করে অবৈধভাবে ভারতে ও বাংলাদেশে পারাপারের কাজ করে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, শুধু মানবপাচার নয়, সে সীমান্তে চোরাচালানেরও মূল হোতা। হোসেন আলী উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বড়াইল গ্রামের বেল্লাল হোসেনের ছেলে।
সীমান্তবর্তী একাধিক সূত্র জানিয়েছ, ভারত-বাংলাদেশে মানব পাচারে বড়লেখা সীমান্তে একাধিক দালাল সক্রিয় রয়েছে। এদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা ইতোমধ্যে ভারতে পালিয়েছেন। জনশ্রুতি রয়েছে, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেনসহ অনেকে এই সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি জমান।
বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন লাতু বিওপি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বড়াইল সীমান্ত দিয়ে দুই ব্যক্তি ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তারা চিহ্নিত মানব পাচারকারী হোসেন আলীর বাড়িত ঢুকে পড়লে বিজিবি লাতু বিওপির নায়েক আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা হোসেন আলীর বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় হোসেন আলী পালিয়ে গেলেও তার মাধ্যমে ভারতে যাওয়া এবং পুনরায় বাংলাদেশে ফেরা দুই ব্যক্তিকে বিজিবি আটক করে। এ সময় তাদের কাছ দুটি ভারতীয় সিমসহ মোবাইল ফোন ও ৯ হাজার রুপি উদ্ধার করে বিজিবি। এ ছাড়া পলাতক হোসেন আলী মানব পাচারে ব্যবহৃত রেজিস্ট্রেশনবিহীন একটি মোটরসাইকেলটি জব্দ করে বিজিবি।
বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আরিফুল হক চৌধুরী জানান, বড়াইল গ্রামের হোসেন আলীর বিরুদ্ধে ভারতে মানব পাচারের অভিযোগ রয়েছে। ভারতের দালাল চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সে মানব পাচার করছে। বৃহস্পতিবার রাতে তার মাধ্যমে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়া দুই ব্যক্তি তার মাধ্যমেই একই সীমান্ত দিয়ে পুনরায় অবৈধভাবে বাংলাদেশে ফিরে তার বাড়িতে অবস্থান করছিল। এ সময় অভিযান চালিয়ে বিজিবি দুটি ভারতীয় সিমসহ মোবাইল ফোন ও রুপিসহ তাদের আটক করেছে। এ ছাড়া মানবপাচার কাজে হোসেন আলীর ব্যবহৃত রেজিস্ট্রেশন বিহীন একটি মোটরসাইকেলও জব্দ করে বিজিবি। এ ব্যাপারে বিজিবি লাতু বিওপির নায়েক মো. আলমগীর হোসেন থানায় মামলা করেছেন।
বড়লেখা থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, বিজিবি’র অভিবাসী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামিকে শুক্রবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পলাতক আসামি হোসেন আলীকে গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা চলছে।