আইভীকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে বাঁধা সৃষ্টিকারী ২’শ জনকে আসামি করে মামলা

- আপডেট সময়- ০৬:৫৬:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫ ১৬৩ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিবেদক।।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেফতারের সময় পুলিশকে সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান, পুলিশের উপর চড়াও হওয়া এবং মেয়র আইভীর বাসভবনে সাড়ে ছয় ঘণ্টা পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ।
রোববার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়। সদর থানার এস আই রিপন মৃধা বাদী হয়ে ৫০ থেকে ৫২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো দুইশ জনকে আসামী করে এ মামলা দায়ের করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) নাছির উদ্দিন আহমেদ।
ওসি জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জের পোষাক শ্রমিক মিনারুল ইসলাম হত্যাসহ সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় চারটি ও ফতুল্লা থানায় একটি হত্যা মামলা রয়েছে।এসব হত্যা মামলার আসামী ধরতে গত বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে জেলা পুলিশের একটি টিম দেওভোগের ‘চুনকা কুটির’ নামক সেলিনা হায়াত আইভির নিজ বাসায় যায়।
এসময় জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক মেয়র ডাক্তার আইভী’র অনুগত দলীয় লোকজন বিভিন্ন মজিদের মাইকে মাইকিং করে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাড়ির সামনে জড়ো করে।
এসময় আইভীর বাড়িমুখী সব কয়টি সড়কে কিছু উশৃংখল কর্মী সমর্থক সিমেন্টের খুঁটি, বালি, ইটের টুকরা, ঝুটের বস্তা, কাঠ, বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে যানচলাচল ও পুলিশের যাতায়াতে বাঁধাসহ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
ওসি আরও জানান, সাবেক মেয়র আইভীর বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল ) হাসিনুজ্জামান ও নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি নাছির আহমেদ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহিনুর আলমসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যকে রাত দশটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখে।
এসময় আইভীর অনুগত আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা পুলিশের বিরুদ্ধে উস্কানিমুলক নানান স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশের ওপর চাড়াও হয়।এসময় রাতভর শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাখে।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার জানান, সাবেক মেয়র আইভিকে গ্রেপ্তারের দীর্ঘ সময় পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখলেও জেলা পুলিশের সদস্যরা অত্যন্ত ধৈর্য্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। এসময় পুলিশ কোনো প্রকার বল প্রয়োগ না করে সাবেক মেয়র আইভীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, পুলিশ আসামীর অবস্থান নিশ্চিত হয়ে আসামীকে গ্রেপ্তার করতে যায়। কিন্তু সংবাদ পেয়ে আওয়ামীলীগের একদল উশৃংখল কর্মী পুলিশের সরকারি কাজে বাধা প্রদান করে, পুলিশের ওপর চাড়াও হয়, পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পুলিশ রাষ্ট্রের হয়ে কাজ করে।অতএব রাষ্ট্রীয় কাজে বাধা প্রদানকারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা নাহলে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। সে কারনেই মামলা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ওই দিনের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক্স মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও সংগ্রহ করে পুলিশের কাজে বাধা প্রদানকারি ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। ঐদিন সাবেক মেয়র আইভীকে গ্রেফতার করার খবর পেয়ে অনেক সাধারন মানুষও বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছিলো। তাই পুলিশ এ বিষয়টি খুব সতর্কতার সাথে তদন্ত করছে। যাতে কোন নিরিহ মানুষ এই মামলায় হয়রানির শিকার না হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে গ্রেপ্তারে চুনকা কুটিরে পুলিশ অভিযান চালায়।
রাতভর শ্বাসরুদ্ধকর ও নানান নাটকীয়তা শেষে পরের দিন শুক্রবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাইনুদ্দিন কাদিরের আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। আইভী বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুরের মহিলা কারাগারে রয়েছেন।