চাঁদপুরে ধনাগোদা নদীতে অবৈধ ভাসমান রেষ্টুরেন্ট, প্রশাসন রহস্যজনক নিশ্চুপ

- আপডেট সময়- ১২:২৬:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫ ৫৭ বার পড়া হয়েছে

এমতেয়াজ পাটওয়ারী ফরহাদ,চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি।।
চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের চরমাছুয়া এলাকায় ধনাগোদা নদীর বুকে প্রায় ২০০টি ড্রামের ওপর নির্মিত একটি ভাসমান রেস্টুরেন্ট নাম তার’ধনাগোদা রিভারভিউ রেস্টুরেন্ট’ যা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে স্থাপন করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বার সতর্কতা ও নির্দেশনার পরও রেস্টুরেন্টটি এখনও সরানো হয়নি, বরং স্বাভাবিকভাবে চালু রয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) অধীনে মেঘনা-ধনাগোদা পানি উন্নয়ন বিভাগের ডুবগী পানি উন্নয়ন শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো আবুল হোসেন খান গত ৪ জুন সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি মো. সাইফুল মোল্লা ও মো. সবুজ মিয়ার নামে একটি অফিস আদেশ জারি করেন। ওই আদেশে তিন দিনের মধ্যে রেস্টুরেন্ট অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত সরকারি জায়গায় বিনা অনুমতিতে নদীর উপর স্থাপনাটি গড়ে তোলা হয়েছে। পূর্বেও রেস্টুরেন্টটি সরিয়ে নেওয়ার মৌখিক অনুরোধ করা হয়েছিল, কিন্তু তা মানা হয়নি। বরং, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে জোরপূর্বক রেস্টুরেন্ট পরিচালনা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), মতলব উত্তর থানা, ফরাজীকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ সাতটি দপ্তরে নোটিশের অনুলিপি দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু প্রায় এক মাস অতিক্রম হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে রেস্টুরেন্টটি আগের মতোই চালু রয়েছে কার্যক্রম।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, নদীর মাঝখানে এমন স্থায়ী কাঠামো নির্মাণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা এবং পরিবেশগত ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তারা দ্রুত প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি অনুমোদন ছাড়া নদী, জলাধার বা খালের জায়গা দখল করে স্থাপনা গড়তে পারে না। আইন অনুযায়ী, প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে এমন অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেন, এটি সম্পূর্ণ অবৈধ স্থাপনা। অনুমতি ছাড়া কেউ নদীর উপর কোনো স্থায়ী বা আধা-স্থায়ী কাঠামো তৈরি করতে পারে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নোটিশ অমান্য করার পরও এখনো অপসারণ না হওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম সাহেদ জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নদী শুধু পানি প্রবাহের মাধ্যম নয়, এটি একটি পরিবেশগত প্রাণতন্ত্র। সরকারি নির্দেশনার পরও ধনাগোদা নদীর ওপর নির্মিত অবৈধ ভাসমান রেস্টুরেন্ট অপসারণ না হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তায় প্রশ্ন উঠেছে—এক মাস পেরিয়ে গেলেও কেন নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না?
এলাকাবাসীর দাবি, জলাধার রক্ষায় প্রশাসনকে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নদীর ওপর সকল অবৈধ দখলদারি বন্ধ করতে হবে। তা না হলে এই ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে আরও বড় পরিবেশগত ও সামাজিক সমস্যার জন্ম দেবে।