না’গঞ্জে ‘আ’লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে সাবেক বিএনপি নেতাকে ‘মারধর’সহ হেনস্তা

- আপডেট সময়- ০৫:৪৬:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫ ৬৭ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি।।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতাকে ‘আওয়ামীলীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে মারধর ও পরনের জামা-কাপড় ছিঁড়ে লাঞ্ছিতসহ হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে।
রোববার(২৯ জুন) দুপুরে উপজেলার হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনে হেনস্তা শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) লিয়াকত আলী।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার আতাউর রহমান মুকুল (৬৮) বন্দর উপজেলা পরিষদের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান। এ ছাড়া তিনি মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি।
হেনস্তার শিকার মুকুলের অভিযোগ, চাঁদা না পেয়ে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার নির্দেশে তার লোকজন পরিকল্পিতভাবে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ ঘটনায় বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, কিছুদিন পূর্বে হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে একটি কাজের দরপত্রের আহবান করা হয়ে। কিন্তু লটারিতে কাজটি পায় এমএস দেওয়ান এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দুপুরের দিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে যান আতাউর রহমান মুকুল।
তখন তাকে পরিকল্পিতভাবে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি মারধর ও পরনের জামা-কাপড় খুলে হেনস্তা করেন।” তবে যারা হামলা করেছে, তারা সকলেই স্থানীয় বিএনপি নেতা বজলুর রহমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ওই টেন্ডারের কাজটি পেতে দুপক্ষই দরপত্র দিয়েছিলেন”।
ঘটনার পরপর পুলিশ হেনস্তা ও মারধরের শিকার মুকুল আহমেদকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরবর্তী বিকালে মুকুল বলেন, “আমি নিজে ঠিকাদারি কাজ করি। বিদ্যুৎকেন্দ্রের এই কাজটি আমি করার দায়িত্ব পেয়েছি। আমি এটির জন্য সরকারি কাগজপত্রে স্বাক্ষরের জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পরপরই আমার ওপর অতর্কিত হামলা হয়। আমাকে গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে মারধর করে জামা-কাপড় সব ছিঁড়ে ফেলে দেয়।
তিনি আরও জানান “ এ ঘটনা পরিকল্পনাকারী বজলুর রহমানের সঙ্গে আমার কখনই খারাপ সম্পর্ক ছিল না। আমরা একসঙ্গে জেলও খেটেছি। কিন্তু ও আমার ওপর এইভাবে হামলা করাবে এটা ধারণাও করতে পারি নাই।”
এদিকে অভিযোগ ওঠা বজলুর রহমান পাশের উপজেলা সোনারগাঁ বিএনপির সহসভাপতি। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পাশেই তার নিজ বাড়ি। এ ঘটনা ব্যাপারে জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি দাবি করেছেন, ঠিকাদারি কাজটি যে প্রতিষ্ঠান পেয়েছে, তার মালিক স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতা। ওই আওয়ামীলীগ নেতার পক্ষ নিয়ে ঠিকাদারি কাজ করতে আসায় ‘ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় জনতা’ মুকুলকে মারধর করেছেন।
এ ঘটনার সঙ্গে তার বা তার ঘনিষ্ঠ কোনো ব্যক্তির জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
এদিকে, মুকুলকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে মূহুর্তেই সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে মাটিতে ফেলে মারধর করা হচ্ছে মুকুলকে।
মারধরের সময় ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ বলে গালাগালি করতেও শোনা যায় এবং তার পরনের পাঞ্জাবি-পায়জামা ছিঁড়ে ফেলে বিবস্ত্র করা হয়।
এঘটনা হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে ‘ওভারহোলিং’ এর কাজ পাওয়া এমএস দেওয়ান এন্টারপ্রাইজের পক্ষ থেকে বজলুর রহমান ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির একটি লিখিত অভিযোগ ছিল বলে জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে আব্দুস সোবহান নামে এক ব্যক্তি এ অভিযোগটি দেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, চাঁদা না দিলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনো কাজ করতে পারবে না বলে গত ২৩ জুন বিএনপি নেতা বজলুর রহমান ও তার লোকজনের হুমকি পেয়েছেন তারা।
এদিকে, হামলার শঙ্কা থেকে পুলিশকে জানিয়েই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বলে জানান আতাউর রহমান মুকুল। ঘটনার সময় সেখানে চারজন পুলিশ সদস্যও ছিলেন দাবি করে মুকুল বলেন, “পুলিশ চেষ্টা করেও কাউকে থামাতে পারেনি।”
এ বিষয়ে তারেক আল মেহেদী বলেন, “ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ ও নিরাপত্তাজনিত শঙ্কার কারণে ঘটনাস্থলে স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু পুলিশ পৌঁছানোর দু-এক মিনিটের মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে যায়। তাৎক্ষণিক পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে নিরাপত্তা হেফাজতে নেন।
এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) লিয়াকত আলী।