সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, উপজেলা প্রশাসন, কুড়িগ্রাম, গণমাধ্যম, গাইবান্ধা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, দেশজুড়ে, নারী ও শিশু, ফিচার, বাংলাদেশ, রংপুর
গাইবান্ধার মরিচের হাট: লাল সোনার বাণিজ্যে জমজমাট

প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৩:৫৭:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫ ২৮ বার পড়া হয়েছে

ফেরদৌস আলম, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গাইবান্ধার ফুলছড়ি হাট যেন লাল মরিচের এক জীবন্ত সমুদ্র। প্রতি সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার এখানে জমে ওঠে এক অনন্য বাণিজ্যের মহাযজ্ঞ, যেখানে কৃষকের পরিশ্রম আর ব্যবসায়ীদের উদ্যম মিলে তৈরি করে কোটি টাকার লেনদেন। গাইবান্ধার বিখ্যাত স্লোগান “স্বাদে ভরা রসমঞ্জুরীর ঘ্রাণ, চরাঞ্চলের ভুট্টা-মরিচ গাইবান্ধার প্রাণ”-এর মতোই এই হাট যেন মরিচের গন্ধে ভাসা এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি ।
হাটের আগের রাত থেকেই শুরু হয় জমজমাট প্রস্তুতি। চরাঞ্চলের কৃষকরা নৌকা, ঘোড়ার গাড়ি কিংবা ভটভটি গাড়িতে করে তাদের উৎপাদিত লাল সোনা নিয়ে আসেন। ভোর না হতেই হাটের মাঠ ভরে ওঠে লাল মরিচের স্তূপে। পাইকাররা দলে দলে এসে বস্তাভর্তি মরিচ কিনে তা পিকআপ, ট্রাক বা ভটভটিতে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠান। স্কয়ার, প্রাণ গ্রুপের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের ক্রেতারাও এখানে সরবরাহ খোঁজেন ।
এ বছর মরিচের ফলন ভালো হওয়ায় দাম কিছুটা নিম্নমুখী। প্রতি মণ মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় ৩-৪ হাজার টাকা কম। তবে কৃষকরা আশাবাদী, ঈদের পর দাম বাড়তে পারে। গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা এবং জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের চাষিরা প্রতি বিঘায় ১০-১২ মণ শুকনো মরিচ উৎপাদন করে স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন ।
প্রান্তিক চাষিরা এই হাটকে তাদের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ হিসেবে দেখেন। তারা আশা করেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মরিচ চাষ আরও লাভজনক হবে। হাটের অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি এবং বিপণন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা গেলে এই হাট শুধু গাইবান্ধারই নয়, সমগ্র উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিতে আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। মরিচের এই হাট যদি আরও সুসংগঠিত হয়, তবে দেশের মসলা বাজারে গাইবান্ধার নামটি হয়ে উঠবে আরও উজ্জ্বল।
ফুলছড়ি হাট শুধু একটি স্থানীয় বাজার নয়, এটি হয়ে উঠেছে গাইবান্ধার কৃষি অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। এখানকার লাল মরিচ শুধু ঝালই যোগায় না, যোগায় হাজার হাজার কৃষক পরিবারের অন্নসংস্থান। “চরাঞ্চলের ভুট্টা-মরিচ” যেমন গাইবান্ধার গর্ব, তেমনি এই হাট গাইবান্ধার অর্থনীতির অহংকার। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা পেলে এই হাট একদিন দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে গাইবান্ধার নাম ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে।