দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর পাশে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপনা করলেন না’গঞ্জের নবনিযুক্ত ডিসি
- আপডেট সময়- ০৫:৩৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫ ১৮ বার পড়া হয়েছে
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশজুড়ে খ্যাতি অর্জনকারী ‘মানবিক ডিসি হিসেবে পরিচিতমূখ মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক(ডিসি) হিসাবে যোগদানের দ্বিতীয় দিনেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রের পাশে দাড়িয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপনা করেছেন। সারা ফেলে দিয়েছেন পুরো জেলাজুড়ে।
বুধবার (১৫ জানুয়ারী) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সকল সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায়।সকলকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এ বিশেষ সম্মাননা তুলে দেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কলেজ পড়ুয়া কোমলমতি ছাত্রের হাতে।
জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জ জেলার গজাড়িয়া থানার চর ভাউশিয়া গ্রামের কৃষক দিল মুহাম্মাদ তাঁর এক বছরের শিশু সন্তান সোহাগকে রেখে মারা যান। পরে এতিম সোহাগের আশ্রয় হয় নারায়ণগঞ্জে সরকার পরিচালিত এতিমখানা শিশু পরিবারে।
সেখানে পড়ালেখা শেষ করে ভর্তি হয় মুসলিম নগর কে এম হাই স্কুলে। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়াকালীন সময়ে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চোখের রেটিনা আস্তে আস্তে শুকাতে থাকে।
সুচিকিৎসার অভাবে ওই ছাত্রের দৃষ্টি শক্তি বিলোপ হওয়ার পথে।দিনের বেলায় তার চোখে মাত্র ২৫% দৃষ্টি শক্তি পায়। কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই পুরোপুরি দৃষ্টিহীন হয়ে পরে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে এসএসসি পাশ করে সরকারী কদম রুসুল কলেজে লেখা পড়া শুরু করে। ২০২১ সালে এইসএসসি পাশ করে রাজধানীর মিরপুর সরকারী বাংলা কলেজে সমাজকর্ম বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয় দৃষ্টিহীন সোহাগ। চরম দ্রারিদ্রতা ও দৃষ্টি শক্তি ক্রমশ কমতে থাকে। এরপরর্তীতে বুক ভরা আশা নিয়ে ২০২৩ সালে এবং পরে ২০২৪ সালে তৎকালীন লেখা পড়ার সহ অনলাইনে ক্লাস ও জরুর কার্যক্রম পরিচালনার সহায়তা চেয়ে ততকালীন নারায়ানগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে স্মার্ট ফোনের চেয়ে লিখিত আবেদন করে ব্যর্থ হন।
এর পরবর্তীতে সদ্য যোগদানকৃত জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞাকে ফোন করে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জানালে তিনি তৎক্ষণাৎ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এসে তার সাথে দ্রুত দেখা করার অনুরোধ জানান।
এরপর গতকাল জেলা প্রশাসক স্থানীয় সাংবাদিকর্মীদের সাথে পূর্ব নির্ধারিত মতবিনিময় সভা শেষে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কলেজ পড়ুয়া ছাত্র সোহাগের হাতে তুলে দেন কাঙ্ক্ষিত স্মার্ট ফোন।
ফোনটি হাতে পেয়ে আবেগ আপ্লূত হয়ে কলেজ ছাত্র সোহাগ তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করতে যেয়ে বলেন,আমি ভাবিনি নতুন ডিসি স্যার গতকাল যোগদান করে আমাকে স্মার্ট ফোনের ব্যবস্থা করে দিবেন।আমি তার কাছে কৃতগ্ন,তার মহানুভবতা আমি বিস্মিত আমি তার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা সহ দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে সোহাগ আরো বলেন, আমি এখন আমার যে কোন বই স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ছবি তুলে সেটাকে মোবাইল এ্যাপস এর মাধ্যমে ভয়েস হিসাবে শুনতে পারবো। এতে করে পড়ালেখা মুখস্থ কার অনেক সহজতর হবে।
এই সময় উপস্থিত ছিলেন-মো. সাকিব-আল-রাব্বি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক),
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা), মো. মাশফাকুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), মো. আলমগীর হুসাইন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, মো. জাহিদ হাসান সিদ্দিকী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এছাড়াও সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগন।
প্রসঙ্গে উল্লেখ যে, গত ৯ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখার উপ-সচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এর আগে গত বছরের ২ নভেম্বর জাহিদুল ইসলাম রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখা এক প্রজ্ঞাপনে তাকে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। রাজবাড়ী জেলায় যোগ দিয়েই দ্রুতই জনবান্ধব ডিসি হিসেবে সুনাম অর্জন করেন জাহিদুল ইসলাম।
নিউজটি শেয়ার করুন
-
সর্বশেষ সংবাদ
-
জনপ্রিয় সংবাদ