সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, আবহাওয়া ও জলবায়ু, ইসলাম ও জীবন, উপজেলা প্রশাসন, কুষ্টিয়া, ক্যাম্পাস নিউজ, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, দূর্নীতি দমন কমিশন(দুদক), দেশজুড়ে, নারী ও শিশু, বাংলাদেশ, ভেড়ামারা, শিক্ষাঙ্গন
স্কুলে অনুপস্থিত থেকেও পাঁচ মাস ধরে বেতন তুলছেন প্রধান শিক্ষক
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৬:১৮:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫ ১৫ বার পড়া হয়েছে
ভেড়ামারা প্রতিনিধি।।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার হালিমা বেগম একাডেমী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের দোসর অনিয়ম আর দুর্নীতির বরপুত্র খ্যাত শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মস্বার্থসহ নানা অভিযোগের প্রমান মিললেও দীর্ঘ ৫ মাসেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। বরং যশোর শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনাকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে তারা। অভিযোগ উঠেছে , প্রশাসনের সাথে আঁতাত করে গত ৫ই অগাষ্টের পর থেকে বিদ্যালয়ে না গেলেও ৫ মাস ধরেই চালু রয়েছে তার বেতন।বিদ্যালয়ের ৩১ জন শিক্ষকের মধ্যে শফিক ও তার স্ত্রী বাদে ২৯ জনই অনাস্থা জানিয়েছে তার উপরে। ১৩ টি অভিযোগের প্রতিটিতে অভিযুক্ত হয়েও কেন ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এ বিষয়ে উদ্বেগ আর হতাশা ব্যক্ত করেছেন শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী।
হালিমা বেগম একাডেমী বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক অসিত কুমার পাল, প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রায় ১ কোটি টাকার দূর্নীতির অভিযোগ এনে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোর শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ করেন। ১৩ টি অভিযোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপবৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রদের থেকে বেতন, ফিস, ছাড়পত্র বাবদ অতিরিক্ত টাকা, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত ফি নিয়ম বহির্ভূত নিতেন। তিনি এফডিআর এর লভ্যাংশ, বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে নেওয়া ফি, ছাড়পত্র বাবদ ফি, পুরাতন বই খাতা বিক্রির টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের জরিমানার টাকাসহ বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের অতিরিক্ত বরাদ্দের টাকা ক্যাশবুকে না উঠিয়ে নিজেই খরচ করতেন। অনিয়ম আর দুর্নীতির প্রত্যেকটি অভিযোগের সত্যতা পান উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিয়ে গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি। প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে যশোর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও অদৃশ্য খুঁটির বলে বহাল তবিয়তেই রয়েছেন তিনি।
প্রভাবশালী শফিকুল কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করে ১৬ বছরে নিয়োগ দিয়েছেন ১১ জন শিক্ষক। প্রত্যেকের থেকে ঘুষ বাবদ আদায় করেছেন ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শিক্ষকদের অভিযোগ, তৎকালীন সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে বিভিন্ন খাত থেকে আয় বাণিজ্য করেছেন কয়েক কোটি টাকা। লাইফ ষ্টাইলের পরিবর্তন করে বানিয়েছেন বহুতল বাড়ি।
সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, ভেড়ামারার হালিমা বেগম একাডেমির প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাজীরা খাতাতে ৫ ই আগস্টের পর থেকে টানা ৫ মাস অনুপস্থিত। কিন্তু বেতন তোলার যে বই, সেখানে স্বাক্ষর করে প্রতি মাসেই নিয়েছেন মাসিক বেতন। ১০ই আগস্ট বহিরাগত সন্ত্রাসী ভাড় করে এনে বিদ্যালয়ে তার অফিস কক্ষ ও প্রধান গেটে দিয়েছিলেন তালা। উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে প্রধান গেটের তালা খুললেও অফিস কক্ষের তালা এখনো ঝুলছে। অফিস কক্ষে তালা থাকায় ব্যবহার করতে পারছেন না প্রয়োজনীয় নথিপত্র ও ব্যাংক একাউন্টের চেকবই।
শিক্ষকদের অভিযোগ, এতো অনিয়ম, দূর্নীতির প্রমান এবং বিদ্যালয় থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বের করে দিলেও তিনি এখনও ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষকদের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে যে কোন সময় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করবেন বলে জানান দিয়েছেন। একটি কুচক্রী মহলও
অথনৈতিক ভাবে ম্যানেজ হয়ে তাকে আবারো প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসাতে যাচ্ছেন। এই নিয়ে শঙ্কিত রয়েছে শিক্ষকরা। হতাশাগ্রস্থ শিক্ষকরা রয়েছেন বিচারহীনতার অস্বস্তিতে। তাদের দাবি, এক শফিকুলের কারনেই নষ্ট হতে বসেছে, সাজানো গোছানো ভেড়ামারার বৃহত্তম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিগত ৩ মেয়াদে একটানা ১৫ বছর জাসদের হাসানুল হক ইনু এমপি থাকায় কোন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পায়নি। ১৬ বছরে তিনি সব রকমের অপকর্ম, দুর্নীতি আর অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে কয়েক কোটি টাকার উপরে অবৈধ আয় করেছেন। । বোর্ডও তার সত্যতা পেয়েছে। শিক্ষা বোর্ড ২৭ আগস্ট প্রচলিত বিধি অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক শফিকুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু অদৃশ্য খুঁটির বলে এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। যশোর বোর্ড কর্তৃপক্ষের নির্দেশ প্রাপ্তির পর গত ৩ সেপ্টেম্বর ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান শিক্ষককে শোকজ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তা আর হয়নি।
বিদ্যালয়টির শিক্ষক শাহিনুর রহমান বলেন, শফিকুর শুধুমাত্র উপবৃত্তি থেকেই ৫ লক্ষ ৮১ হাজার ৪৮৫ টাকা ১৬ কিস্তির মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংক থেকে তুলেছেন। তিনি বিদ্যালয়ের নামে যে ব্যাংক একাউন্ট আছে সেখানে লেনদেন করতেন না। তিনি দম্ভ করে বলতেন, আমিই প্রধান শিক্ষক, সভাপতি আমার পকেটে। আমার যা ইচ্ছা তাই করব। কেউ আমাকে কিছু করতে পারবে না।
বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন বলেন, বিগত আমলে প্রধান শিক্ষক আর তার স্ত্রী পলি খাতুন মিলে যা ইচ্ছে তাই করেছে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বানিয়েছিল হাসানুল হক ইনুর ছেলেকে। সদস্য নির্বাচন করতো ইচ্ছামত। তার কথায় ছিল আইন আর শেষ কথা। আমাকে এবং সিরাজ স্যারকে স্কুলের মধ্যে মেরেছিল। বিদ্যালয়ের বেঞ্চ নিয়ে গিয়ে বাড়িতে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। শহরের মধ্যেই ৪তলা বাড়ি করেছে, যা শিক্ষকতার আয় দিয়ে সম্ভব নয়।
ভেড়ামারা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফারুক আহমেদ বলেন, তার অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আমি কেউ নয়। তাছাড়া এই বিষয়টি আমার দপ্তরের দেখভালের বিষয় নয়। তার বেতন ভাতা প্রদানে আমার কোন হাত নেই। বিষয়টি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি দেখবে।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোন প্রকার ছুটি না নিয়েই ৫ মাস অনুপস্থিত, নিয়মিত ভাবে বেতন তুলছেন, কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেন। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শফিকুল ইসলামের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে পূর্বেকার ইএনও আকাশ কুমার কুন্ডু থাকা অবস্থায় তদন্ত হয়েছিল। তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে যশোর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রশাসনকে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেয়। আমি পদাধিকার বলে বিদ্যালয়টির এডহক কমিটির সভাপতি থাকা অবস্থায় নভেম্বর মাসের ৭ তারিখে একটি মিটিং ডেকেছিলাম। কিন্তু নভেম্বরের ৩ তারিখে শিক্ষা বোড কর্তৃক নতুন এডহক কমিটি নির্বাচনের প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাই আর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার সময়ে অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও শফিকুরকে এক মাসের বেতন দেওয়ার বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি নতুন তাই দিয়েছি। তবে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী মাস থেকে সে যেন আর বেতন না পান, তার ব্যবস্থা নেবো। তবে তিনি কর্তৃপক্ষ কারো থেকে ছুটি না নিয়েই অনুপস্থিত আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
নানা অভিযোগে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিক বার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিক বার রিং দিলেও মোবাইল টি বন্ধ পাওয়া গেছে। তার স্ত্রী পলি খাতুনের মোবাইল ফোনে কথা বললেও অভিযুক্ত শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বক্তব্য দিতে রাজী হন নি। গত ৫ জানুয়ারী এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিকাল ৪টায় তার বাড়িতে গেলেও তিনি দেখা করেন নি। এসময় তার স্ত্রী পলি খাতুন বলেন, আমার স্বামী হালিমা বেগম একাডেমী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা। সে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ছুটি নিয়ে গত ৫মাস স্কুলে যায় নি। তিনি স্বীকার করেন, সে নিয়মিত ভাবেই বেতন পাচ্ছেন।