বিদ্রোহী কবি নজরুলের ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
- আপডেট সময়- ০৭:২৪:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪ ২২০ বার পড়া হয়েছে
ছবি: কাজী নজরুলের জন্ম ভীটে চুরুলিয়া, বর্ধমান
ধর্মের বেড়াজাল ছিন্ন করে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন..!
ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায় , কলকাতা।।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান কবি ও সঙ্গীতকার ছিলেন। মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্যিক জীবনে অপরিসীম সৃষ্টির অমূল্য ভাণ্ডার তাকে অবিস্মরণীয় করে রেখেছে।তার প্রথম জীবন খুব সুখের ছিল না।
জন্ম এক মুসলিম পরিবারে। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল ও রানীগঞ্জ সংলগ্ন চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মে ছিলেন ১৮৯৯ সালের ২৪ মে। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ এবং মায়ের নাম ছিল জাহিদা খাতুন।
মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশের ঢাকাতে ১৮৭৬ সালের ২৯ আগস্ট। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অব্যবহিত পরেই।
তার দুই স্ত্রী ছিলেন। প্রথম স্ত্রী নার্গিস আসার খান। বিবাহের পরদিনই স্ত্রীকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে বিয়ে করেছিলেন বাঙালি ব্রাহ্মণ কন্যা প্রমিলা দেবীকে। আমৃত্যু তার সঙ্গেই ছিলেন।
কর্ম জীবনের প্রথমে সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। বেঙ্গলি রেজিমেন্টের ৪৯ প্লাটুনে।
চার সন্তান ছিল। কাজী সব্যসাচী, কাজী অনিরুদ্ধ, কৃষ্ণ মোহাম্মদ, ও অরবিন্দ খালেদ।
কাজী সব্যসাচীর স্ত্রী উমা। দুজনেই হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু উমা পরে বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। সব্যসাচী হিন্ডু থেকে গিয়েছিলেন।
তাদের তিন সন্তান মধ্যে মিষ্টি কেবল হিন্দু। যদিও তিন সন্তানের সকলেই হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন,তবুও কন্যা খিলখিল ও পুত্র বাবুল ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন।
কনিষ্ঠ পুত্র কাজী অনিরুদ্ধ এবং তার স্ত্রী কল্যানী হিন্দু থেকে যান।তাদের সন্তান অরিন্দম,অনিন্দিতা, ও অনির্বাণ সকলেই হিন্দু। কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত গানটি মনে পড়ে,” একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান”, এবং হিন্দু না ওরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার “।
তিনি ধর্মান্ধ ছিলেন না। প্রমিলা দেবী ঘরে মা কালীর পুজা করতেন। আবার ঈদের উৎসবেও মেতে উঠতেন সকলে। তার লেখা কালীর ওপর গান অসাধারন জনপ্রিয়। ” বলরে জবা বল, কোন সাধনায় পেলি রে তুই মায়ের চরণ তল।” এখনও আকাশ বাতাস মাতিয়ে রাখে। এছাড়াও অনেক গান রয়েছে তার কালী মায়ের ওপর। তিনি অভিনয়ও করেছেন। নারদের ভূমিকায় তাকে অভিনয় করতে দেখা গেছে বাংলা সিনেমায়।
তার বিদ্রোহের আগুন ঝরা গান ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারকে কাঁপিয়ে তুলেছিল।তাকে জেলে বন্দি করে তার ওপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করা হয়েছে।
শেষভাগে তাকে ভারত সরকার পদ্মবিভূষণ উপাধিতে ভূষিত করে। বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছে। কোলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে ডক্টরেট উপাধি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছে ডিলিট উপাধি।
তার নাতনি খিলখিল বাংলাদেশের নামী কণ্ঠ শিল্পী ও সংগঠক।
কাজী নজরুল ৭৬ বছর বেঁচে ছিলেন; কিন্তু তার মধ্যে থেকে ৩৪ বছর ১ মাস ২০ দিন নির্বাক ছিলেন। যদি এই দীর্ঘ সময় তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারতেন তাহলে তিনি বাংলা সাহিত্যকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতেন।
কাজী নজরুল ইসলামের লেখা সর্বশেষ কবিতা গ্রন্থের নাম ‘নতুন চাঁদ’। সুস্থাবস্থায় প্রকাশিত সর্বশেষ কাব্যের নাম ‘নির্ঝর’। কাজী নজরুল ইসলাম রচিত কবিতার সংখ্যা ৯০০।
‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য নজরুলকে এক বছর কারাবন্দি হয়ে থাকতে হয়েছিল। ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২ সালে ‘ধূমকেতু’র ১২তম সংখ্যায় ওই কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল।
১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতার আলবার্ট হলে কবিকে সর্বভারতীয় বাঙালিদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, ব্যারিস্টার ওয়াজেদ আলী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক।
নজরুলের প্রথম যে বইটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়, তার নাম ‘যুগবাণী’।
এইচএমভি-তে নজরুল সংগীতের প্রথম রেকর্ড করা শিল্পীর নাম শ্রী হরেন্দ্রনাথ দত্ত।
৮টি গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে কাজী নজরুল ইসলাম রচিত প্রায় ২ হাজার গানের রেকর্ড বেরিয়েছিল।
কবি নজরুল ইসলাম তার নিজ কণ্ঠে ৬টি গান রেকর্ড করেছিলেন। গানগুলো হলো-
১. দিতে এনে ফুল হে প্রিয় : ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩২
২. পাষাণে ভাঙালে ঘুম : ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩২
৩. কেন আসিলে ভালবাসিলে :এপ্রিল ১৯৩৩
৪. দাঁড়ালে দুয়ারে মোর : এপ্রিল ১৯৩৩
৫. ঘুমাইতে দাও শ্রান্ত রবিরে; কবির সাথে কণ্ঠ দিয়েছিলেন ইলা মিত্র এবং সুনীল ঘোষ।
৬. একি সুরে তুমি গান শোনালে : রেকর্ড নং পাওয়া যায়নি।
রবীন্দ্র প্রয়াণ দিনে কাজী নজরুল ইসলামের সেই দিনের স্বরচিত কবিতা ‘রবিহারা’ কবিকণ্ঠে বেতারে প্রচারিত হয়।
লাঙল পত্রিকার প্রধান পরিচালক ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ভারতে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের সংগীত ও কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকতার বিখ্যাত ‘রেড ফ্ল্যাগ’ গানটির প্রথম অনুবাদকের গৌরব কাজী নজরুল ইসলামের। [১৯২৭ সালের ২১ এপ্রিল : গণবাণী]