ঢাকা ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ:-
মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বিএনপির দুই নেতাকে বহিষ্কার ফ্রিজের কম্প্রে‌সার বিস্ফোরণ; সিদ্ধিরগঞ্জে নারী ও শিশুসহ একই পরিবারের দগ্ধ-৯ বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহারের ‘২৪ ঘন্টা না পেরোতেই’ ফের ৬২ করার দাবি বাস মালিকদের  জীবনের শেষ লেখায় অনেক অভিযোগসহ প্রশ্ন রেখে গেলেন সাংবাদিক বিভুরঞ্জন উচ্চশিক্ষায় ডুওলিংগো টেস্ট: প্রস্তুতি, সুযোগ ও গ্রহণযোগ্যতা গজারিয়ার মেঘনা নদীতে মিলল নিখোঁজ সাংবাদিক বিভুরঞ্জনের মরদেহ তোপের মুখে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের হুমকি, গ্রাহকদের যে বার্তা দিলো তিতাস না’গঞ্জে জাল সার্টিফিকেট তৈরির দায়ে দোকান মালিকের জরিমানাসহ কারাদণ্ড টেকনাফে জেলের বেশে মাদক পাচারের চেষ্টা, ৯৮শ’ ইয়াবা উদ্ধার গাইবান্ধায় পুলিশি নির্যাতনে সিজু হত্যা মামলায় ওসিসহ আসামী-২০ হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে হাফেজ মাহবুবুর রহমান সায়েন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত-১০ ফিটলিস্ট প্রস্তুত; সেপ্টেম্বরেই সকল জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাসভাড়া ৫ টাকা বাড়িয়ে ৫৫ টাকার সিদ্ধান্ত নারায়ণগঞ্জের বালুরমাঠ ও মদনপুরে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান দুদকের ফের আরেক উপপরিচালক কমলেশ মন্ডল বরখাস্ত বাগেরহাটে আসন কমিয়ে ৩টি করার প্রতিবাদে আন্দোলন কর্মসূচীর ঘোষণা ঈশ্বরদীতে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন টেকনাফে বিজিবির অভিযানে মানব পাচারকারী চক্রের ২ সদস্য গ্রেপ্তার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই ফের বদলি কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও শরণখোলায় জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত মৌলভীবাজারে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত এনবিআর’র ফের ১৭ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সম্পদ বিবরণী চেয়েছে দুদক মৌলভীবাজার জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি শ্রীমঙ্গলের আমিনুল নারায়ণগঞ্জে শহীদ জিয়া হলে অগ্নিকাণ্ড রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক ১৬৪২৯ মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে তিস্তার নামেই সেতু চায় স্থানীয়রা, ‘মাওলানা ভাসানী’ নামে আপত্তি পাথরকাণ্ডে ডিসির ওএসডির পর, কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও বদলি পাথরকান্ডে সিলেটের ডিসি মাহবুব মুরাদকে ওএসডি এনবিআর সংস্কারে বাধার অভিযোগে ফের ৫ কর কমিশনার বরখাস্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত হোস্ট-টিচারদের কোটবাজারে অনশনে সেই আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম এখন সিলেটের ডিসি বহুল প্রতিক্ষীত খানপুর হাসপাতালের ১৫তলা ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু প্রশাসনিক পদে ফের বড় রদবদল বেসরকারি চ্যানেল মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীনকে গ্রেপ্তার বিদেশে বাংলাদেশি কূটনৈতিক মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ শ্রীমঙ্গলে চুরির ঘটনার ৬ ঘন্টার মধ্যে চোরসহ মালামাল উদ্ধার ঈশ্বরদীতে বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মদিন পালন মোরেলগঞ্জে ১’শ পিচ ইয়াবাসহ শরণখোলার যুবক আটক মৌলভীবাজারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জন্মদিনে দোয়া মাহফিল পূর্ব সুন্দরবনে একমাসে ৭০ জেলে আটক, ফাঁদসহ ১৪৮টি ট্রলার জব্দ শাহিনূর আদর্শ স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও মেধা বৃত্তি সংবর্ধনা না’গঞ্জের বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্নক সহায়তায় আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডিসি নান্দাইলে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার ডলফিন রক্ষায় সুন্দরবনের বনবিভাগের সচেতনতামূলক মাইকিং শরণখোলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা গাইবান্ধা বন্যার দারপ্রান্তে: নদীগুলো উত্তালে জনজীবন বিপর্যস্ত পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রমের দিকে গাইবান্ধায় দোকানের বাকি টাকা চাওয়ায় গুলি, যুবক-গৃহবধূ আহত কাশিমপুর কারাগার থেকে পালানো আসামি র‍্যাব-৯’র জালে কুষ্টিয়ায় বাকিতে সিগারেট না দেওয়ায় দোকানির কান কামড়ে ছিঁড়ে দিল যুবক বড়লেখায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার-৯ কুষ্টিয়ায় ফের সাংবাদিককে হাতুড়ি-লোহার রড দিয়ে হামলা সিদ্ধিরগঞ্জে গলাকাটা নারীসহ অজ্ঞাত যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার নারায়ণগঞ্জের যানজট নিরসনে ডিসির পাশে চেম্বার ও বিকেএমইএ দিল্লির জঙ্গলে রাজপ্রাসাদ! আওয়াধ রাজ্যের শেষ রাজপুত্রের কাহিনি টেকনাফে ৩০ হাজার পিস ইয়াবাসহ ক্রিস্টাল মেথ জব্দ রাস্তা নয় যেন মরণফাঁদ, চরমদুর্ভোগে ৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কুলাউড়ায় বিপুল পরিমাণে এসকপ কোডিনসহ আটক-১ নারায়ণগঞ্জ সদরে নতুন ইউএনও তাছলিমা শিরিনের যোগদান জায়গা জটিলতায় আটকে আছে সুন্দরগঞ্জের সড়ক উন্নয়ন, বিপাকে পৌরবাসী কমলগঞ্জে ভাইয়ের হাতে ভাই খুনের রহস্য উদ্ঘাটন,আলামত জব্দ  চাঁদপুরে অর্থ লেনদেনের বিরোধে চাচার হাতে ভাতিজা খুন, আটক-৩ না’গঞ্জে যুবদল নেতাসহ ১০জনের ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের জন্য মহা-কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্তের পথে সাংবাদিক তুহিন হত্যার বিচারের দাবিতে বন্দর উপজেলা প্রেসক্লাবের মানববন্ধন গাজীপুরে নৃশংসভাবে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে এনইউজে’র মানববন্ধন সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাবের বিক্ষোভ  শ্রীমঙ্গলে দুই কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার-১ সাংবাদিক তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে কক্সবাজারে বিক্ষোভসহ মানববন্ধন বিপন্ন উপকূল; বাগেরহাটে চারটি আসন বহালের দাবিতে সিইসিকে স্মারকলিপি গাইবান্ধায় শিশুকে জিম্মি করে সুদের টাকা দাবি; গ্রেপ্তার-৪ সাংবাদিক তুহিনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে কুষ্টিয়ায় মানবন্ধন পেশাদার সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় ‘হলুদ সাংবাদিকতার’ দৌরাত্ম উপড়ে ফেলতে হবে আদিবাসীর অধিকার ছাড়া উন্নয়ন অসম্ভব: গাইবান্ধায় আদিবাসী দিবসে দাবি দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর না’গঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের এডহক কমিটির অনুমোদন গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যায় নারীসহ গ্রেপ্তার-৪ বড়লেখা সীমান্তে রোহিঙ্গাসহ আটক ৮ জনকে পুশইন শ্রীমঙ্গলে ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে বিজয়ী সদর ইউপি টেকনাফে অবৈধ ট্রলিং বোটসহ ১৭ জেলে আটক  কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নারীর মৃত্যু গাজীপুরে ট্রাভেল ব্যাগ থেকে খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ জুড়ীর আলোচিত চেয়ারম্যান শেলু অবশেষে গ্রেপ্তার চাঁদপুরের ক্ষুদে মেসি সোহানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান গত দুইদিনে দেশে সাংবাদিকসহ অন্তত ৫ জনকে প্রকাশ্যে হত্যা শরণখোলায় নদীভাঙনে রিং বাঁধ ভেঙে শতশত বিঘা জমি ও বসতবাড়ি বিলীন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে নোয়াব’র গভীর উদ্বেগ বিকেলে চাঁদাবাজি নিয়ে লাইভ, রাতে সাংবাদিককে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা অবৈধ বালু উত্তোলনে তিস্তা সেতু ঝুঁকিতে আজ দেশব্যাপী বিজয় র‍্যালি করবে বিএনপি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৪তম প্রয়াণবার্ষিকী আজ বৈরী আবহাওয়াও প্রকম্পিত সোনারগাঁয়ের বিএনপির এমপি প্রার্থী মান্নানের বিজয় র‍্যালী নারায়ণগঞ্জের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ম্যাকলিন ফের আইসিটি মামলায় গ্রেপ্তার ধর্মের আড়ালে ২২ কোটি টাকার চাল আত্মসাৎ, সাবেক এমপিসহ অভিযুক্ত-১৫ সুন্দরবনে কীটনাশক ও নৌকাসহ ৮ জেলে আটক না’গঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার নতুন এডহক কমিটির অনুমোদন ‘নতুন বাংলাদেশে’ র‍্যাব বিলুপ্তির পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সুস্পষ্ট কাঠামো করবে এনসিপি কুলাউড়ায় অজ্ঞাত কিশোরের ম*র*দেহ উদ্ধার ২৪’র ‘গণঅভ্যুত্থান’ স্মরণে বিএনপির বিজয় মিছিলে যোগ দিতে মাসুদুজ্জামানের আহ্বান

বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস : আরবির পরিবর্তে ইংরেজির উত্থান

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময়- ০৫:৩৬:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭৩ বার পড়া হয়েছে

 

ফেরদৌস আলম।।

বিশ্বের ভাষা সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করছে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সামার ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুইস্টিকস এর (এসআইএল) গবেষণাটিকেই সবচেয়ে বড় বলে গ্রহণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণার ফলাফল বলছে, পৃথিবীতে ভাষার সংখ্যা ৬ হাজার ৯০৯। যদিও প্রকাশিত এই গবেষণামূলক ফলাফলটি বেশ পুরোনো। তবে এ কথা সত্য যে, অধিকাংশ ভাষা যার দ্বারা অল্পসংখ্যক মানুষ কথা বলে। আর প্রধান কতগুলো ভাষা যার একটির মাধ্যমে এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ কথা বলে। এই ভাষাগুলোর সংখ্যা ১০০ এর ও বেশি। এই ১০০ ভাষার মধ্য হতে ১৯টি ভাষা যেগুলোর প্রত্যেকটির মাধ্যমে ৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ কথা বলে। যেমন দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলা, হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবী, তামিল, মারাঠি ইত্যাদি। এশিয়ার বাকী অংশে ব্যবহৃত ভাষা চায়না, মালয়ী, ফারসি, ইন্দোনেশীয়, জাপানিজ, কোরিয়ান ইত্যাদি। আবার ইউরোপ মহাদেশে রাশিয়ান, ইতালিয়ান, জার্মানী, তুর্কী ভাষাগুলো ব্যবহার হয়।
এই ভাষাগুলোর সাথে আরো পাঁচটি ভাষা উল্লেখ করতে হয় যেগুলোর মাধ্যমে অনেক রাষ্ট্রের মানুষ কথা বলে। এগুলোই হল বিশ্বের অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভাষা। যেমন: আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ ও পর্তুগীজ। ভাষা নিয়ে আল-কুরআনে এসেছে: “আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্ৰ্য। এতে তো অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য।” (সূরা আর-রুম: ২২)।
জালালুদ্দীন আস-সুয়ূতী বলেন: “সর্বপ্রাচীন ও প্রথম ভাষা হলো আরবী।” হযরত আদমকে (আ.) জান্নাতে পরীক্ষার জন্য যে শব্দজ্ঞান ও ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছিল তা ছিল আরবি-এতে কোন দ্বিমত নেই। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন: “হযরত আদম (আ.) জান্নাতে আরবি ভাষায় কথা বলতেন। অতঃপর আল্লাহর আদেশ অমান্য করায় আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর কাছ হতে তা ছিনিয়ে নেন। ফলে তিনি সুুরয়ানী ভাষায় কথা বলতে থাকেন। তবে তিনি তওবা করলে পুনরায় আরবি বলতে সক্ষম হন।” দুনিয়াতে সর্বপ্রথম ইসমাঈল আলাইহিস সালাম আরবিতে কথা বলেন।
আরবি ভাষা বিভিন্নভাবে বিস্তার লাভ করে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেশ বিজয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, ইসলাম প্রচার ও হজ্জ কার্যক্রম। তবে এগুলোর মধ্যে দেশ বিজয়ের মাধ্যম ছিল আরবি ভাষা প্রসারে সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম। যেগুলো এখন আরব অঞ্চল নামে পরিচিত। আবার কিছু এলাকা আছে যেগুলো ইসলামের ছায়াতলে আসলেও সেখানে আরবি ভাষার প্রচলন ঘটেনি। যেমন বাংলাদেশ, ইরান, পাকিস্তান, সিন্দুর আশেপাশের অঞ্চল ও স্পেন। ইসলামের বিজয়গুলোর মাধ্যমে অসংখ্যা জাতি-গোষ্ঠী আরবি ভাষার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। কেননা, ইসলাম ধর্মের প্রধান উৎস আল-কুরআন ও হাদীসের ভাষা আরবী। এছাড়াও এ ধর্মের অনেক ধর্মীয় ইবাদত আরবি ভাষার দ্বারা সম্পাদন করতে হয়। ফলে ওই যুগে আরবি ভাষা প্রসারে ইসলাম ধর্মের বিরাট ভূমিকা ছিল। অনেক অনারব জাতি-গোষ্ঠীও মাতৃভাষার পাশাপাশি আরবিকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ করে। এছাড়া আরবি ভাষা ওই সময়ে উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করেছিল। কেননা তা উমাইয়্যা ও আব্বাসীয় খিলাফত কালে বিজ্ঞান ও সাহিত্যসহ সকল শাখার ভাষা ছিল। সময়ের সাথে সাথে আরবি ভাষা ইসলাম ধর্ম ছাড়াও ওই যুগের অনন্য ধর্মাম্বলীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ভাষা হয়ে প্রভাব বিস্তার করেছিল। যেমন আরব দেশের খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, গ্রীক অর্থোডক্স, ক্যাথলিক এবং সুরইয়ান গীর্জার ভাষা। তেমনিভাবে মধ্যযুগে ইহুদী ধর্মের অনেক ধর্মীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়াবলি আরবি ভাষায় লেখা হত।
সময়ের পরিক্রমায়, হালাকু খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলীয়রা আব্বাসীয় রাজ্য ও ইসলামী খেলাফতের ৩ বারের রাজধানী (৭৬২-৭৯৬, ৮০৯-৮৩৬, ৮৯২-১২৫৮) বাগদাদকে ১২ দিন অবরোধ রাখার পর ৯ সফর ৬৫৬ হিজরী মোতাবেক ১০ ফেব্রুয়ারী ১২৫৮ সালে তারা যে হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ কার্যক্রম চালিয়েছিল-এ সময়ের পর আরবি ভাষার অবস্থান সবচেয়ে নাজুক ছিল। মঙ্গোলীয়দের এ ভয়াবহ তা-বের ফলে আরবি সভ্যতা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিরাট হুমকির মুখে পড়ে।
অতঃপর উসমানী খিলাফত (১২৮৮-১৯২৪) বিস্তারকালে আনাতোলিয়া ও বলকান রাষ্ট্রে আরবি ভাষা পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসতে শুরু করে। বিশেষকরে বিশাল জনগোষ্ঠি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার ফলে। ফলশ্রুতি আরবি ভাষা উসমানি খিলাফতের দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা লাভ করে।
আরবি ভাষার মন্দাভাব ছিল প্রায় চারশত বছর। অতঃপর উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে মিশর ও সিরিয়ায় সাংস্কৃতিক রেনেসাঁর পর আবার আরবি ভাষা নবরূপে ফিরে আসতে শুরু করে। এসময়ে অনেক মনীষী ও বুদ্ধিজীবীর আবির্ভাব ঘটে যারা আরবি হরফের সংস্কার করে আধুনিক আরবি পত্রিকার বের করেন। এবং এসময়ে অনেক সাহিত্য পরিষদ গড়ে ওঠে যা নতুন করে বিশুদ্ধ আরবি ভাষার প্রচার ও প্রসারে বিরাট ভূমিকা রাখে। এসময়ে যেসকল মনীষী এবং সাহিত্যিক আরবি ভাষার সমৃদ্ধি সাধনে অবদান রাখেন তাদের মধ্যে আমীরুশ শু‘আরা আহমদ শাওক্বী, শাইখ নাছীফ আল-ইয়াঝুজী, বুতরুস আল-বুসতানী এবং জিবরান খলীল জিবরান অন্যতম। এদের হাতে প্রকাশিত হয় আধুনিক অভিধান, যেমন ক্বামুস মুহীত আল-মুহীত’র প্রণেতা বুতরুস আল-বুসতানী ও বিশ্বকোষ-যেগুলো বর্তমান সময় পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তেমনিভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে আরবি প্রেস যা আরব চিন্তাধারা পুনরুজ্জীবিত করতে অসাধারণ অবদান রাখে।
কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আরবি ভাষার উন্নতিসাধন ও সমৃদ্ধিকরণে তাঁদের এ প্রচেষ্টা শুধুমাত্র সাহিত্য শাখার মধ্যে সীমাবন্ধ ছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ অন্য শাখাগুলোতে তাদের এ বিচরণ ছিল না, যেমন এ শাখাগুলোতে পূর্বে আরবির বিশেষ প্রভাব ছিল। ফলে বিংশ শতকের শেষ দিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে শীতল যুদ্ধের (১৯৪৭-১৯৯১) পর ইংরেজি ভাষা অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে এমনকি আরব দেশগুলোতেও। এভাবে ইংরেজি ভাষা আরবি ভাষার স্থান দখল করে নেয়।
গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে অনেক প্রচেষ্টা ব্যয়ের পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৯ম অধিবেশনে (১৯৫৪ সালের ৪ ডিসেম্বর) সিদ্ধান্ত (সিদ্ধান্ত নং ৮৭৮) নেওয়া হয় যে, সাধারণ পরিষদের কিছু অফিসিয়াল ডকুমেন্ট আরবিতে অনুবাদ করা হবে। তবে শর্ত হচ্ছে বছরে সর্বোচ্চ ৪ হাজার পৃষ্ঠা অনুবাদ করা হবে। আর যে আরব দেশ তা চাইবে সেদেশকে অনুবাদের খরচ বহন করতে হবে। ১৯৬০ সালে ইউনেস্কো এক সিদ্ধান্ত নেয় যে, আরব রাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর আঞ্চলিক অধিবেশনগুলোতে আরবি ভাষা ব্যবহার করা হবে এবং মূল্যবান দলীল-পত্রগুলো আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হবে। ১৯৬৬ সালে ইউনেস্কোতে আরবি ভাষাকে আরো ব্যাপকভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবং ১৯৬৮ সাল থেকে এ সংস্থার সকল কাজে আরবি ভাষার ব্যবহার শুরু হয়।
মরক্কো সরকার কিছু আরব রাষ্ট্রকে সাথে নিয়ে জাতিসংঘে আরবি ভাষাকে ব্যবহারের জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে থাকে। আরব লীগও তাদের ৬০তম অধিবেশনে আরবিভাষাকে জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৩১৯০ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৭৩ সালের ২৮তম অধিবেশনে আরবীকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ফলে আরবি ইংরেজী, ফরাসী, চীনা, রাশিয়ান ও স্পেনীশ ভাষার পর জাতিসংঘের ৬ষ্ঠ অফিসিয়াল ল্যাগুয়েজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
জাতিসংঘ প্রতি বছর ১৮ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক আবরী ভাষা দিবস’ পালন করে থাকে। কারণ এই তারিখেই আরবি ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা লাভ করে। সৌদি আরব ও মরক্কো সরকারের প্রস্তাবের পর ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে ‘ইউনেস্কোর ১৯০ তম কার্যনির্বাহী পরিষদ’ এ ১৮ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ঐ বছরেই প্রথম ইউনেস্কো দিবসটি উদযাপন করে। এ দিবসকে সামনে রেখে জাতিসংঘে আরব দেশের বিভিন্ন সংগঠন, কূটনৈকিত মিশনগুলো বইমেলা, চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও বক্তৃতা ও কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। আরবিকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা করার দাবি অনেক আগেই উঠেছিল। ১৯৬০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ১৫তম সাধারণ অধিবেশনে মিশরের রাষ্ট্রপ্রধান জামাল আব্দুন নাসের প্রথম আবরিতে বক্তৃতা প্রদান করেন। তিনি তাঁর সেই ভাষণেই আরবিকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান।
বর্তমান ৪২২ মিলিয়ন তথা ৪২ কোটি মানুষের মাতৃভাষা হল আরবি। এছাড়া যাদের ভাষা আরবি নয় তারা মুসলিম হওয়ার কারণে দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আরবিভাষা চর্চা করে থাকে। পৃথিবীতে ২২টি আবর দেশ আছে। এশিয়া মহাদেশে ১২টি দেশ। তা হলো: ইরাক, ইয়েমেন, ওমান, কাতার, কুয়েত, জর্ডান, বাহরাইন, ফিলিস্তিন, লেবানন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিরিয়া ও সৌদি আরব। আফ্রিকা মহাদেশে ১০টি দেশ। সেগুলো: আলজেরিয়া, কমোরোস, জিবুতি, তিউনেশিয়া, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, মিশর, লিবিয়া, সুদান ও সোমালিয়া। এই দেশগুলো ‘আরব বিশ্ব’ নামে পরিচিত এবং তাদের ‘আরব লীগ’ নামে আন্তর্জাতিক সংগঠন রয়েছে। আরবিবিশ্বের অনেক ভাষাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করেছে। হয়তো ইসলামের কারণে, ভৌগোলিক কারণে বা ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে। যেমনভাবে ল্যাটিন ভাষা ইউরোপের অন্যান্য ভাষাকে প্রভাবিত করেছে। যে সমস্ত ভাষা আরবীর দ্বারা ৩০%-এর বেশি শব্দাবলী প্রভাবিত হয়েছে সেগুলো হলো: বাংলা, উর্দু, হিন্দি, ফারসী, কাশমিরী, পশতু, তাজিক, তুর্কী, কুরদী, হিব্রু, সোমালী, সোয়াহিলী, তাজরীনী, উরুমী, ফূলানী, মালয়, দিভেহীসহ আরো অনেক ভাষা। এখনো কিছু ভাষা আছে যেগুলো আরবিহরফ ও আরবি বর্ণমালার ত্রুমানুসারে লেখা হয়। যেমন: উর্দ্দু, ফারসী, কাশমিরী, পশতু, তাজিক, পূর্ব তুকিস্তানী, কুরদী ইত্যাদি। কামাল পাশার শাসন আমলের আগে তুর্কী ভাষা আরবিহরফে লেখা হত, পরে রোমান ভাষায় লেখা শুরু করে। তেমনিভাবে ইউরোপিয়ান ভাষাতেও প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে ইংরেজী, স্প্যানিশ, পুর্তগীজ, মালটি ভাষাতে। তথ্য-প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেটে আরবি বইয়ের বিশাল সমাহার রয়েছে। কোন বিষয় বা মনের কোন ইচ্ছা আরবিতে লিখে সার্চ দিলেই সাথে সাথে পাওয়া যায় সেবিষয়ের উপর অনেক বই ও প্রবন্ধ। এছাড়া ইন্টারনেটে ছড়ানো আছে অসংখ্য ঢ়ফভ ও ফড়প. আকারে সকল বিষয়ের উপর আরবিবই ও প্রবন্ধ যা সাহায্য করবে শিক্ষা, গবেষণা ও অনুবাদ কাজে।
আরবি ভাষার যেপ্রভাব ছিল তা আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে গেছে। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে জাতিসংঘের সর্বশেষ দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত আরবি ভাষা। অথচ জাতিসংঘে এ ভাষার স্বীকৃতি আরো অনেক আগে হওয়ার কথা ছিল। আরবি ভাষার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে অনারব দেশগুলোতে বিশেষকরে বাংলাদেশে আরব দেশগুলোর বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। এ পদক্ষেপগুলোর অংশ হিসেবে কিছু প্রস্তাবনা হচ্ছে ক. বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরবি বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদেরকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যের উপর আরো উৎসাহিত করতে আরব দেশগুলো থেকে স্বল্প মেয়াদ বা দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষক প্রেরণ করা। খ. আরবি বিভাগ থেকে ভাল রেজাল্ট নিয়ে যেসকল শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছে তাদের জন্য আরব দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে উচ্চ শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা। গ. আরব ও বাংলাদেশি আরবি বিভাগের মাঝে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের পারস্পারিক মতামত ও চিন্তা-চেতনার আদান-প্রদান করা। বিশ্ববিদ্যায়গুলোর আরবি বিভাগে আরবি ভাষা শিক্ষা দানের জন্য আধুনিক আরবি বই এবং বিভিন্ন তথ্য-প্রযুক্তি প্রদান করা।
ঘ. প্রখ্যাত আরবি সাহিত্যিক, আরবদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের উপর সেমিনার আয়োজনে আরব দূতাবাসগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করা।
ঙ. আরবি বিভাগগুলোতে আরব দূতাবাস দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ‘আরবি ভাষা ক্লাব’ পরিচালনা করা।
চ. আরবি শিক্ষার্থীদেরকে আরব দেশে কর্মক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া।
ছ. আরব দেশে কর্মী নেওয়ার জন্য প্রাথমিক আরবি ভাষাজ্ঞান বাধ্যতামূলক করা।
জ. ব্রিটিশ কাউন্সিল যেমন IELTS সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে সারা বিশ্বে উচ্চতর মানসম্পন্ন ইংরেজি ভাষা প্রসারে কাজ করছে এ ধরনের ‘আরব কাউন্সিল’ প্রতিষ্ঠা করা। এ প্রস্তাবনাগুলো অনারব রাষ্টগুলোতে আরবি ভাষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যায়। তবে এগুলো বাস্তবায়নের পূর্ব শর্ত হচ্ছে আরব রাষ্ট্রগুলোতে স্থিতিশীলতা ও সীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় পারস্পারিক ঐক্য। এটা আরবদের গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত যে, আরবি ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি মানেই ইসলাম, মুসলিম ও আরবদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়া। মানুষ তো কুরআন পড়ে হাদীস পড়ে এভাবেই আরবি ভাষার চর্চা ও প্রচার হচ্ছে-এমন চিন্তা-ভাবনা থাকলে আরবি ভাষা তার আগের মর্যাদায় ফিরে আসতে পারবে না। তাই আরবদের উচিত হবে এমন দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা যাতে আরবি ভাষা আবার তার হারানো সোনালী অতীতের মত প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। পাশাপাশি আরবি শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব বাংলা ভাষার উন্নয়নে আরবি ভাষার মূল্যবান প্রবন্ধ ও গ্রন্থগুলোকে বাংলায় অনুবাদ করা। এতে মাতৃভাষা বাংলা আরো ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধি লাভ করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

ট্যাগস:-

বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস : আরবির পরিবর্তে ইংরেজির উত্থান

আপডেট সময়- ০৫:৩৬:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

 

ফেরদৌস আলম।।

বিশ্বের ভাষা সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করছে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সামার ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুইস্টিকস এর (এসআইএল) গবেষণাটিকেই সবচেয়ে বড় বলে গ্রহণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণার ফলাফল বলছে, পৃথিবীতে ভাষার সংখ্যা ৬ হাজার ৯০৯। যদিও প্রকাশিত এই গবেষণামূলক ফলাফলটি বেশ পুরোনো। তবে এ কথা সত্য যে, অধিকাংশ ভাষা যার দ্বারা অল্পসংখ্যক মানুষ কথা বলে। আর প্রধান কতগুলো ভাষা যার একটির মাধ্যমে এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ কথা বলে। এই ভাষাগুলোর সংখ্যা ১০০ এর ও বেশি। এই ১০০ ভাষার মধ্য হতে ১৯টি ভাষা যেগুলোর প্রত্যেকটির মাধ্যমে ৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ কথা বলে। যেমন দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলা, হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবী, তামিল, মারাঠি ইত্যাদি। এশিয়ার বাকী অংশে ব্যবহৃত ভাষা চায়না, মালয়ী, ফারসি, ইন্দোনেশীয়, জাপানিজ, কোরিয়ান ইত্যাদি। আবার ইউরোপ মহাদেশে রাশিয়ান, ইতালিয়ান, জার্মানী, তুর্কী ভাষাগুলো ব্যবহার হয়।
এই ভাষাগুলোর সাথে আরো পাঁচটি ভাষা উল্লেখ করতে হয় যেগুলোর মাধ্যমে অনেক রাষ্ট্রের মানুষ কথা বলে। এগুলোই হল বিশ্বের অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভাষা। যেমন: আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ ও পর্তুগীজ। ভাষা নিয়ে আল-কুরআনে এসেছে: “আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্ৰ্য। এতে তো অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য।” (সূরা আর-রুম: ২২)।
জালালুদ্দীন আস-সুয়ূতী বলেন: “সর্বপ্রাচীন ও প্রথম ভাষা হলো আরবী।” হযরত আদমকে (আ.) জান্নাতে পরীক্ষার জন্য যে শব্দজ্ঞান ও ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছিল তা ছিল আরবি-এতে কোন দ্বিমত নেই। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন: “হযরত আদম (আ.) জান্নাতে আরবি ভাষায় কথা বলতেন। অতঃপর আল্লাহর আদেশ অমান্য করায় আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর কাছ হতে তা ছিনিয়ে নেন। ফলে তিনি সুুরয়ানী ভাষায় কথা বলতে থাকেন। তবে তিনি তওবা করলে পুনরায় আরবি বলতে সক্ষম হন।” দুনিয়াতে সর্বপ্রথম ইসমাঈল আলাইহিস সালাম আরবিতে কথা বলেন।
আরবি ভাষা বিভিন্নভাবে বিস্তার লাভ করে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেশ বিজয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, ইসলাম প্রচার ও হজ্জ কার্যক্রম। তবে এগুলোর মধ্যে দেশ বিজয়ের মাধ্যম ছিল আরবি ভাষা প্রসারে সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম। যেগুলো এখন আরব অঞ্চল নামে পরিচিত। আবার কিছু এলাকা আছে যেগুলো ইসলামের ছায়াতলে আসলেও সেখানে আরবি ভাষার প্রচলন ঘটেনি। যেমন বাংলাদেশ, ইরান, পাকিস্তান, সিন্দুর আশেপাশের অঞ্চল ও স্পেন। ইসলামের বিজয়গুলোর মাধ্যমে অসংখ্যা জাতি-গোষ্ঠী আরবি ভাষার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। কেননা, ইসলাম ধর্মের প্রধান উৎস আল-কুরআন ও হাদীসের ভাষা আরবী। এছাড়াও এ ধর্মের অনেক ধর্মীয় ইবাদত আরবি ভাষার দ্বারা সম্পাদন করতে হয়। ফলে ওই যুগে আরবি ভাষা প্রসারে ইসলাম ধর্মের বিরাট ভূমিকা ছিল। অনেক অনারব জাতি-গোষ্ঠীও মাতৃভাষার পাশাপাশি আরবিকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ করে। এছাড়া আরবি ভাষা ওই সময়ে উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করেছিল। কেননা তা উমাইয়্যা ও আব্বাসীয় খিলাফত কালে বিজ্ঞান ও সাহিত্যসহ সকল শাখার ভাষা ছিল। সময়ের সাথে সাথে আরবি ভাষা ইসলাম ধর্ম ছাড়াও ওই যুগের অনন্য ধর্মাম্বলীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ভাষা হয়ে প্রভাব বিস্তার করেছিল। যেমন আরব দেশের খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, গ্রীক অর্থোডক্স, ক্যাথলিক এবং সুরইয়ান গীর্জার ভাষা। তেমনিভাবে মধ্যযুগে ইহুদী ধর্মের অনেক ধর্মীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়াবলি আরবি ভাষায় লেখা হত।
সময়ের পরিক্রমায়, হালাকু খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলীয়রা আব্বাসীয় রাজ্য ও ইসলামী খেলাফতের ৩ বারের রাজধানী (৭৬২-৭৯৬, ৮০৯-৮৩৬, ৮৯২-১২৫৮) বাগদাদকে ১২ দিন অবরোধ রাখার পর ৯ সফর ৬৫৬ হিজরী মোতাবেক ১০ ফেব্রুয়ারী ১২৫৮ সালে তারা যে হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ কার্যক্রম চালিয়েছিল-এ সময়ের পর আরবি ভাষার অবস্থান সবচেয়ে নাজুক ছিল। মঙ্গোলীয়দের এ ভয়াবহ তা-বের ফলে আরবি সভ্যতা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিরাট হুমকির মুখে পড়ে।
অতঃপর উসমানী খিলাফত (১২৮৮-১৯২৪) বিস্তারকালে আনাতোলিয়া ও বলকান রাষ্ট্রে আরবি ভাষা পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসতে শুরু করে। বিশেষকরে বিশাল জনগোষ্ঠি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার ফলে। ফলশ্রুতি আরবি ভাষা উসমানি খিলাফতের দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা লাভ করে।
আরবি ভাষার মন্দাভাব ছিল প্রায় চারশত বছর। অতঃপর উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে মিশর ও সিরিয়ায় সাংস্কৃতিক রেনেসাঁর পর আবার আরবি ভাষা নবরূপে ফিরে আসতে শুরু করে। এসময়ে অনেক মনীষী ও বুদ্ধিজীবীর আবির্ভাব ঘটে যারা আরবি হরফের সংস্কার করে আধুনিক আরবি পত্রিকার বের করেন। এবং এসময়ে অনেক সাহিত্য পরিষদ গড়ে ওঠে যা নতুন করে বিশুদ্ধ আরবি ভাষার প্রচার ও প্রসারে বিরাট ভূমিকা রাখে। এসময়ে যেসকল মনীষী এবং সাহিত্যিক আরবি ভাষার সমৃদ্ধি সাধনে অবদান রাখেন তাদের মধ্যে আমীরুশ শু‘আরা আহমদ শাওক্বী, শাইখ নাছীফ আল-ইয়াঝুজী, বুতরুস আল-বুসতানী এবং জিবরান খলীল জিবরান অন্যতম। এদের হাতে প্রকাশিত হয় আধুনিক অভিধান, যেমন ক্বামুস মুহীত আল-মুহীত’র প্রণেতা বুতরুস আল-বুসতানী ও বিশ্বকোষ-যেগুলো বর্তমান সময় পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তেমনিভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে আরবি প্রেস যা আরব চিন্তাধারা পুনরুজ্জীবিত করতে অসাধারণ অবদান রাখে।
কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আরবি ভাষার উন্নতিসাধন ও সমৃদ্ধিকরণে তাঁদের এ প্রচেষ্টা শুধুমাত্র সাহিত্য শাখার মধ্যে সীমাবন্ধ ছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ অন্য শাখাগুলোতে তাদের এ বিচরণ ছিল না, যেমন এ শাখাগুলোতে পূর্বে আরবির বিশেষ প্রভাব ছিল। ফলে বিংশ শতকের শেষ দিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে শীতল যুদ্ধের (১৯৪৭-১৯৯১) পর ইংরেজি ভাষা অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে এমনকি আরব দেশগুলোতেও। এভাবে ইংরেজি ভাষা আরবি ভাষার স্থান দখল করে নেয়।
গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে অনেক প্রচেষ্টা ব্যয়ের পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৯ম অধিবেশনে (১৯৫৪ সালের ৪ ডিসেম্বর) সিদ্ধান্ত (সিদ্ধান্ত নং ৮৭৮) নেওয়া হয় যে, সাধারণ পরিষদের কিছু অফিসিয়াল ডকুমেন্ট আরবিতে অনুবাদ করা হবে। তবে শর্ত হচ্ছে বছরে সর্বোচ্চ ৪ হাজার পৃষ্ঠা অনুবাদ করা হবে। আর যে আরব দেশ তা চাইবে সেদেশকে অনুবাদের খরচ বহন করতে হবে। ১৯৬০ সালে ইউনেস্কো এক সিদ্ধান্ত নেয় যে, আরব রাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর আঞ্চলিক অধিবেশনগুলোতে আরবি ভাষা ব্যবহার করা হবে এবং মূল্যবান দলীল-পত্রগুলো আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হবে। ১৯৬৬ সালে ইউনেস্কোতে আরবি ভাষাকে আরো ব্যাপকভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবং ১৯৬৮ সাল থেকে এ সংস্থার সকল কাজে আরবি ভাষার ব্যবহার শুরু হয়।
মরক্কো সরকার কিছু আরব রাষ্ট্রকে সাথে নিয়ে জাতিসংঘে আরবি ভাষাকে ব্যবহারের জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে থাকে। আরব লীগও তাদের ৬০তম অধিবেশনে আরবিভাষাকে জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৩১৯০ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৭৩ সালের ২৮তম অধিবেশনে আরবীকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ফলে আরবি ইংরেজী, ফরাসী, চীনা, রাশিয়ান ও স্পেনীশ ভাষার পর জাতিসংঘের ৬ষ্ঠ অফিসিয়াল ল্যাগুয়েজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
জাতিসংঘ প্রতি বছর ১৮ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক আবরী ভাষা দিবস’ পালন করে থাকে। কারণ এই তারিখেই আরবি ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা লাভ করে। সৌদি আরব ও মরক্কো সরকারের প্রস্তাবের পর ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে ‘ইউনেস্কোর ১৯০ তম কার্যনির্বাহী পরিষদ’ এ ১৮ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ঐ বছরেই প্রথম ইউনেস্কো দিবসটি উদযাপন করে। এ দিবসকে সামনে রেখে জাতিসংঘে আরব দেশের বিভিন্ন সংগঠন, কূটনৈকিত মিশনগুলো বইমেলা, চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও বক্তৃতা ও কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। আরবিকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা করার দাবি অনেক আগেই উঠেছিল। ১৯৬০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ১৫তম সাধারণ অধিবেশনে মিশরের রাষ্ট্রপ্রধান জামাল আব্দুন নাসের প্রথম আবরিতে বক্তৃতা প্রদান করেন। তিনি তাঁর সেই ভাষণেই আরবিকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান।
বর্তমান ৪২২ মিলিয়ন তথা ৪২ কোটি মানুষের মাতৃভাষা হল আরবি। এছাড়া যাদের ভাষা আরবি নয় তারা মুসলিম হওয়ার কারণে দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আরবিভাষা চর্চা করে থাকে। পৃথিবীতে ২২টি আবর দেশ আছে। এশিয়া মহাদেশে ১২টি দেশ। তা হলো: ইরাক, ইয়েমেন, ওমান, কাতার, কুয়েত, জর্ডান, বাহরাইন, ফিলিস্তিন, লেবানন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিরিয়া ও সৌদি আরব। আফ্রিকা মহাদেশে ১০টি দেশ। সেগুলো: আলজেরিয়া, কমোরোস, জিবুতি, তিউনেশিয়া, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, মিশর, লিবিয়া, সুদান ও সোমালিয়া। এই দেশগুলো ‘আরব বিশ্ব’ নামে পরিচিত এবং তাদের ‘আরব লীগ’ নামে আন্তর্জাতিক সংগঠন রয়েছে। আরবিবিশ্বের অনেক ভাষাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করেছে। হয়তো ইসলামের কারণে, ভৌগোলিক কারণে বা ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে। যেমনভাবে ল্যাটিন ভাষা ইউরোপের অন্যান্য ভাষাকে প্রভাবিত করেছে। যে সমস্ত ভাষা আরবীর দ্বারা ৩০%-এর বেশি শব্দাবলী প্রভাবিত হয়েছে সেগুলো হলো: বাংলা, উর্দু, হিন্দি, ফারসী, কাশমিরী, পশতু, তাজিক, তুর্কী, কুরদী, হিব্রু, সোমালী, সোয়াহিলী, তাজরীনী, উরুমী, ফূলানী, মালয়, দিভেহীসহ আরো অনেক ভাষা। এখনো কিছু ভাষা আছে যেগুলো আরবিহরফ ও আরবি বর্ণমালার ত্রুমানুসারে লেখা হয়। যেমন: উর্দ্দু, ফারসী, কাশমিরী, পশতু, তাজিক, পূর্ব তুকিস্তানী, কুরদী ইত্যাদি। কামাল পাশার শাসন আমলের আগে তুর্কী ভাষা আরবিহরফে লেখা হত, পরে রোমান ভাষায় লেখা শুরু করে। তেমনিভাবে ইউরোপিয়ান ভাষাতেও প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে ইংরেজী, স্প্যানিশ, পুর্তগীজ, মালটি ভাষাতে। তথ্য-প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেটে আরবি বইয়ের বিশাল সমাহার রয়েছে। কোন বিষয় বা মনের কোন ইচ্ছা আরবিতে লিখে সার্চ দিলেই সাথে সাথে পাওয়া যায় সেবিষয়ের উপর অনেক বই ও প্রবন্ধ। এছাড়া ইন্টারনেটে ছড়ানো আছে অসংখ্য ঢ়ফভ ও ফড়প. আকারে সকল বিষয়ের উপর আরবিবই ও প্রবন্ধ যা সাহায্য করবে শিক্ষা, গবেষণা ও অনুবাদ কাজে।
আরবি ভাষার যেপ্রভাব ছিল তা আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে গেছে। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে জাতিসংঘের সর্বশেষ দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত আরবি ভাষা। অথচ জাতিসংঘে এ ভাষার স্বীকৃতি আরো অনেক আগে হওয়ার কথা ছিল। আরবি ভাষার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে অনারব দেশগুলোতে বিশেষকরে বাংলাদেশে আরব দেশগুলোর বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। এ পদক্ষেপগুলোর অংশ হিসেবে কিছু প্রস্তাবনা হচ্ছে ক. বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরবি বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদেরকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যের উপর আরো উৎসাহিত করতে আরব দেশগুলো থেকে স্বল্প মেয়াদ বা দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষক প্রেরণ করা। খ. আরবি বিভাগ থেকে ভাল রেজাল্ট নিয়ে যেসকল শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছে তাদের জন্য আরব দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে উচ্চ শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা। গ. আরব ও বাংলাদেশি আরবি বিভাগের মাঝে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের পারস্পারিক মতামত ও চিন্তা-চেতনার আদান-প্রদান করা। বিশ্ববিদ্যায়গুলোর আরবি বিভাগে আরবি ভাষা শিক্ষা দানের জন্য আধুনিক আরবি বই এবং বিভিন্ন তথ্য-প্রযুক্তি প্রদান করা।
ঘ. প্রখ্যাত আরবি সাহিত্যিক, আরবদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের উপর সেমিনার আয়োজনে আরব দূতাবাসগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করা।
ঙ. আরবি বিভাগগুলোতে আরব দূতাবাস দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ‘আরবি ভাষা ক্লাব’ পরিচালনা করা।
চ. আরবি শিক্ষার্থীদেরকে আরব দেশে কর্মক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া।
ছ. আরব দেশে কর্মী নেওয়ার জন্য প্রাথমিক আরবি ভাষাজ্ঞান বাধ্যতামূলক করা।
জ. ব্রিটিশ কাউন্সিল যেমন IELTS সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে সারা বিশ্বে উচ্চতর মানসম্পন্ন ইংরেজি ভাষা প্রসারে কাজ করছে এ ধরনের ‘আরব কাউন্সিল’ প্রতিষ্ঠা করা। এ প্রস্তাবনাগুলো অনারব রাষ্টগুলোতে আরবি ভাষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যায়। তবে এগুলো বাস্তবায়নের পূর্ব শর্ত হচ্ছে আরব রাষ্ট্রগুলোতে স্থিতিশীলতা ও সীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় পারস্পারিক ঐক্য। এটা আরবদের গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত যে, আরবি ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি মানেই ইসলাম, মুসলিম ও আরবদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়া। মানুষ তো কুরআন পড়ে হাদীস পড়ে এভাবেই আরবি ভাষার চর্চা ও প্রচার হচ্ছে-এমন চিন্তা-ভাবনা থাকলে আরবি ভাষা তার আগের মর্যাদায় ফিরে আসতে পারবে না। তাই আরবদের উচিত হবে এমন দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা যাতে আরবি ভাষা আবার তার হারানো সোনালী অতীতের মত প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। পাশাপাশি আরবি শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব বাংলা ভাষার উন্নয়নে আরবি ভাষার মূল্যবান প্রবন্ধ ও গ্রন্থগুলোকে বাংলায় অনুবাদ করা। এতে মাতৃভাষা বাংলা আরো ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধি লাভ করবে।