সর্বশেষ:-
প্রচ্ছদ /
অর্থ ও বাণিজ্য, আইন আদালত, আইন-আদালত, আবহাওয়া ও জলবায়ু, জাতীয়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, দূর্নীতি দমন কমিশন(দুদক), দেশজুড়ে, নারী ও শিশু, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, মুন্সিগঞ্জ
মুন্সীগঞ্জে পর্যাপ্ত আলু মজুত থাকলেও মূল্য অসাধু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৫:২২:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪ ১৮ বার পড়া হয়েছে
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।।
মুন্সীগঞ্জের হিমাগারে পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে আলু।বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে অসাধু সিন্ডিকেট।ফলে হিমাগার থেকে বের করার পর হাত বদলালেই বেড়ে যাচ্ছে আলুর দাম। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে উৎপাদক পর্যায়ে ২৮ টাকার আলু হাত বদলে ভোক্তার ব্যাগে উঠছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দরে।ফলে ‘লাভের মধু’ খাচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।অথচ গত বছরের অক্টোবরের এ সময়ে খুচরা বাজারে আলুর দর ছিল ৪০ টাকা কেজি।অন্যদিকে আলুর দাম বৃদ্ধির জন্য খুচরা বিক্রেতারা দায়ী করছেন পাইকারদের।আর পাইকাররা দুষছেন হিমাগার সিন্ডিকেটকে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ,হাত বদলালেই বাড়ছে দাম।বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট।ফোনে ফোনে দাম বাড়াচ্ছেন মজুতদাররা।এ অবস্থায় বাজার মনিটরিং জোরদার না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ভোক্তারা।কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, মুন্সীগঞ্জে গত মৌসুমে ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়।এতে ১০ লাখ টনেরও বেশি আলু উৎপাদন হয়েছিল।এ বছর মধ্য নভেম্বর থেকে শুরু হবে চলতি বছরের আলু রোপণ মৌসুম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,হিমাগারে আলু সংরক্ষণের পরই শুরু হয় দাম বাড়ানোর খেলা।বর্তমানে জেলার ৫৪ হিমাগারে মজুত আছে ১ লাখ ৫১ হাজার টন আলু।এর মধ্যে ৭১ হাজার টন রয়েছে খাবার আলু,সেই খাবার আলু নিয়েই চলছে অসাধু সিন্ডিকেটের কারসাজি।এরই অংশ হিসেবে অসাধু সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য উৎপাদনের শীর্ষ জেলা মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলো থেকে নিয়ন্ত্রিতভাবে বের করছে আলু।কৃষকের কাছ থেকে ২৮ টাকা দরে কেনা ও হিমাগারে সংরক্ষণে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের খরচ পড়ে কেজি প্রতি ৩৮ টাকা।তারা কেজি প্রতি ৯ টাকা বেশি মুনাফা নিয়ে হিমাগারের গেটেই বিক্রি করছেন ৪৭ টাকা দরে।এরপর ৫ টাকা বৃদ্ধি করে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কেজি প্রতি ৫২ টাকা দরে আলু বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে।আর খুচরা বিক্রেতারা ৬ থেকে ৮ টাকা মূল্য বাড়িয়ে বাজারে ভোক্তাদের কাছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছে।সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হিমাগার থেকে খুচরা বাজারে পৌঁছানো পর্যন্ত ৫ ধাপে হাত বদল হওয়ায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অধিক মুনাফায় বিক্রি করায় আলুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি আলুর দরে বড় ফারাক,দেখলেই তা সহজেই বোঝা যায় বলে মন্তব্য করেন কৃষকসহ হিমাগার মালিকেরা।কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার সূত্রে জানা গেছে,মুন্সীগঞ্জে গত মৌসুমে বৃষ্টির কারণে দুই দফা আলু রোপণ করা হয়।এতে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়ে ১৭ থেকে ১৮ টাকা।কৃষক সেই আলু পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছে ২৮ টাকা কেজি দরে,যা ৫০ কেজির এক বস্তা আলুর মূল্য দাঁড়ায় ১৪০০ টাকা।সবজি ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ইমনের ভাষ্য,বর্তমানে খুচরা বাজারে আলু গত সপ্তাহের চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।লাল আলু ৬০ ও সাদাটা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়।হিমাগার থেকে ৪৭ টাকা কেজি দরে ক্রয়ের পর পাইকারিতে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।আলু ব্যবসায়ী খোকন পোদ্দার বলেন,এবার আমি কৃষকের কাছ থেকে কেজিপ্রতি ২৮ টাকা দরে ৭ লাখ টাকার আলু ক্রয় করেছি।যার মূল্য ৫০ কেজিতে ১৪০০ টাকা।এরপর হিমাগারে সংরক্ষণ খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি আলু ৩৮ টাকা পড়েছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাসেদ মোল্লা জানান,কৃষকের কাছ থেকে তারা ৩৫ টাকা কেজি দরে আলু কিনেছেন,যা হিমাগারের খরচ দিয়ে ৪০ টাকা পড়েছে।তাই হিমাগার থেকে ৪৭ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন,আমরা এক বছর পুঁজি খাঁটিয়ে যে ব্যবসা করতে পারি না,পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা তার চেয়ে বেশি ব্যবসা করছেন।তার ভাষ্য-এ ছাড়া মুক্তারপুর এলাকার হিমাগারগুলো থেকে সদরের বিভিন্ন বাজারে আলু পরিবহনে কেজিপ্রতি খরচ হয় ১ টাকা।কিন্তু তারা ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে আলু বিক্রি করছেন।এ কারণেই আলুর মূল্য বেড়েছে।মুন্সীগঞ্জ কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার দুলাল চন্দ্র মণ্ডল বলেন, প্রতিবার হাত বদলে প্রতি কেজি আলুতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।কর্তৃপক্ষ তদারকি করলেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।তাঁর দাবি,মুন্সীগঞ্জ জেলায় বছরে আলুর চাহিদা থাকে প্রায় দেড় লাখ টন।কিন্তু উৎপাদন হয়ে থাকে ১০ লাখ টনের ওপরে।জেলার হিমাগারগুলোতে উৎপাদিত আলুর প্রায় সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া ভাড়াতেই আলু সংরক্ষণ করেন তারা।তাই দাম বাড়ানোর বিষয়ে তাদের কোনো হাত নেই।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান,এ বছর অন্যান্য বারের তুলনায় প্রায় ৫০ হাজার টন আলু কম সংরক্ষণ করা হয়েছে। বর্তমানে জেলার ৬৪টি হিমাগারের ৫৪টিতে ১ লাখ ৫১ হাজার টন আলু সংরক্ষণ রয়েছে।হিমাগার থেকে এসব আলু ৪৬-৪৭ টাকা কেজি দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি হচ্ছে।এক প্রশ্নের জবাবে উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন,আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী ও কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা।তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।আশা করছি,বর্তমানে যে দামে আলু বিক্রি হচ্ছে,এর চেয়ে আর বাড়বে না।মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সামির হোসেন সিয়ামের ভাষ্য,আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে খুচরা বাজার থেকে শুরু করে হিমাগার পর্যন্ত তদারকি করা হচ্ছে।কেউ যাতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আলুর দাম বাড়াতে না পারে সেদিকে নজরদারি করা হচ্ছে।