সর্বশেষ:-
বিখ্যাত আন্তর্জাতিক টেনিস খেলোয়াড় লিয়েন্ডার পেজ ও বাংলাদেশ
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৪:৩২:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪৬ বার পড়া হয়েছে
কলকাতা প্রতিনিধি।।
অবিভক্ত বাংলা ছিল বিশ্ববিখ্যাত। কতো মহাপুরুষ জন্মেছিলেন এই পূণ্যভূমিতে!! হিসেব করলে তল খুঁজে পাওয়া যাবে না।আর অভিশপ্ত দেশ ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ববঙ্গ তথা আজকের বাংলাদেশের মাটিতে জন্মেছিলেন প্রথিত যশা বিজ্ঞানী,সাহিত্যিক, প্রত্নতত্ত্ববিদ, কবি, শিল্পী অনেকে। আমরা একের পর এক তাদের কাহিনী তুলে ধরবো। হরপ্পা, মহেঞ্জোদারোর আবিষ্কার কর্তা নীলরতন ধর,কিংবদন্তি কামুনিস্ট নেতা প্রয়াত জ্যোতি বসু, বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু থেকে শুরু করে অনেক নাম এসে পরে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মকান্ডও পূর্ববঙ্গকে ঘিরে রয়েছে।
এবারে আসছি এক বিখ্যাত কবির কথায়।কাব্যে অমৃতাক্ষর ছন্দের স্রষ্টা মাইকেল মধুসূদন দত্ত জন্মসূত্রে উর্বর পূর্ববঙ্গের মানুষ।তিনি ব্রিটিশদের সংস্পর্শে এসে খ্রিস্টান ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এজন্য যদিও দায়ী তার প্রেম গাঁথা।
অনেকেই জানেন না আজকের বিখ্যাত আন্তর্জাতিক টেনিস খেলোয়াড় লিয়েন্ডার পেজ এর পূর্বপুরুষ মাইকেল মধুসূদন দত্তর আদি বাসভূমি তথা জন্মস্থান বর্তমান বাংলাদেশের যশোরে।
মাইকেল মধুসূদনের বংশধর লিয়েন্ডার পেজ l
লিয়েন্ডার তার মায়ের মাধ্যমে বাংলা কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সরাসরি বংশধর।মাইকেল মধুসূদন দত্ত – অবিভক্ত বাংলার যশোহর জেলায় কপোতাক্ষ নদীর তীরে অবস্থিত
সাগরদাঁরি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন | তার মা জাহ্নবী ও বাবা রাজনারায়ণ দত্ত | সেকালের রীতি অনুযায়ী ফার্সি ভাষায় দক্ষ ছিলেন বাবা| কলকাতা সদর দেওয়ানী আদালতে তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেন l প্রচুর অর্থও উপার্জন করেছিলেন | মধুসূদন ছোটবেলায় গ্রামের পাঠশালায় শিক্ষা আরম্ভ করেন। ১৮৩৩ সালে কলকাতায় এসে হিন্দু কলেজের প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হন |
পাশ্চাত্য জীবনের প্রতি প্রবল আকর্ষণের ফলেই হিন্দুধর্ম ছেড়ে করে খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করেন | কাজের সুত্রে ১৮৪৮ সালে মাদ্রাজ তথা আজকের চেন্নাই যান | সেখানে সাত বছর কর্মকালে শিক্ষক, সাংবাদিক ও কবি হিসেবে সামাজিক প্রতিষ্ঠা লাভ করেন | মাদ্রাজ যাবার পরেই তিনি প্রেমে আসক্ত হয়ে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান, রেবেকা ম্যাক্টাভিসকে বিয়ে করেন | তিনিই প্রথম ভারতীয়, যিনি একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু সেই সম্পর্ক বেশিদিন টেকেনি। ১৮৫৬ সালে তিনি রেবেকাকে ছেড়ে এক ফরাসী মহিলা হেনরিয়েটার প্রেমে পড়েন l পরে তাকে বিয়ে করে কলকাতায় বাস করা শুরু করেন l এই নতুন সম্পর্কের জন্যই তিনি ১৮৫৬ সালে রেবেকা এবং তাঁর চার সন্তানকে মাদ্রাজে রেখেই ফিরে আসেন কলকাতায়। তাই আর কোনো সম্পর্ক থাকেনি তাঁদের সঙ্গে।
জীবনে নতুন প্রেম l এই প্রেমিকা বনাম স্ত্রী এমিলিয়া হেনরিয়েটা তার জীবনে মুখ্য তখন। তাঁর সঙ্গেই আমৃত্যু ঘর করেছেন কবি মাইকেল মধুসূদন। এমনকি মৃত্যুর পরও, একসঙ্গে শায়িত রয়েছেন তাঁরা।
এখন আসি গল্পের দ্বিতীয় অংশে l ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা টেনিস খেলোয়াড় লিয়েন্ডার পেজ l টেনিস কোর্টে নিজের মতো করে ‘কবিতা’ বানান তিনি। অবশ্য কবিতা যে তাঁর রক্তে! তাঁর পূর্বপুরুষের নাম যে মাইকেল মধুসূদন দত্ত! কি ভাবে? এইসম্পর্কটা খুঁজতে গেলে অনেকটা দূরের অতীতের ইতিহাসের দিকে ফিরে দেখতে হবে l মাইকেল মধুসূদন-হেনরিয়েটারই তিন সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন অ্যালবার্ট নেপোলিয়ন দত্ত। খুব বেশিদিন মা-বাবার সংস্পর্শ পাননি তিনি। দুর্ঘটনায় একদিন তিনি মারা যান।যখন অ্যালবার্ট মারা যান, তখন তাঁর দুই ছেলে, তিন মেয়ে। সেই ছেলেদেরই একজন মাইকেল ডটন। তাঁর মেয়ে জেনিফার ডটন। পরবর্তীকালে বিয়ের মাধ্যমে যিনি হয়েছিলেন জেনিফার পেজ। এঁরই সুযোগ্য পুত্র লিয়েন্ডার পেজ। বুঝলেন তো, মাইকেল মধুসূদন দত্ত কীভাবে লিয়েন্ডার পেজের পূর্বপুরুষ ? মধুসূদন দত্তের সঙ্গে একদম সরাসরি রক্তের সম্পর্কে আবদ্ধ ভারতীয় টেনিস জগতের মহাতারকা লিয়েন্ডার পেজ। আর মাইকেল মধুসূদন দত্ত – তিনিতো যশোহর জেলায় কপোতাক্ষ নদীর তীরে অবস্থিত সাগরদাঁরি গ্রামের সন্তান | বাংলাদেশের গৌরবের মুকুটে আরেকটি রত্নখচিত মুক্তোর অলংকার।