সর্বশেষ:-
অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময়- ০৭:১৮:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪ ৬৬ বার পড়া হয়েছে
ডাকাতেরা যখন ভ্রাতার ভূমিকায়..!
ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা :
ডাকাত কথাটি শুনলেই ভয়ে আতকে উঠতে হয়। আজও বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানোর সময় ডাকাতদের গল্প শোনান হয়। কিন্তু ১৯৪৭ সালের অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতার আগে ডাকাতদের অনেকের ভূমিকা ছিল মুক্তি যোদ্ধাদের মতো।
অতীতে ডাকাতরা অনেকেই দেশের কাজে অথবা সমাজের কাজে ডাকাতি করতেন। অন্যান্য ডাকাতদের থেকে তাদের বৈশিষ্ট্য ছিল সম্পূর্ন আলাদা। তারা কেউ ডাকাতি করতেন ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য, আবার অনেকে জমিদারি অত্যাচারের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করে তাদের আর্থিক সাহায্য দেবার জন্য। এমন বহু ঘটনা রয়েছে যেখানে ডাকাতরা ডাকাতির পর গভীর জঙ্গলে গিয়ে তাদের আরাধ্য মা কালীর কাছে অত্যাচারী ব্যক্তিকে বলিও চড়াতেন।
এমনই একটি বিখ্যাত কালী মন্দিরের কথা বলছি। জলপাইগুড়ির গোশালা মোড়ে জাতীয় সড়কের ধারে প্রায় তিনশো বছরের পুরনো এই মন্দির। স্থানীয়দের দাবি, শক্তির উপসানার পর ডাকাতি করতে বেরোতেন দেবী চৌধুরানি। কথিত আছে, একসময় করোলা নদীর ঘাট থেকে মন্দিরের গর্ভগৃহ পর্যন্ত মাটির নীচে সুড়ঙ্গ ছিল।
জলপাইগুড়ি শহরের শেষ প্রান্তে মাসকলাই বাড়ি ছাড়িয়ে জাতীয় সড়কের পাশে গোশালা মোড়ে মাড়োয়ারি শ্মশানের গায়ে অবস্থিত শ্মশানকালী মন্দির। স্থানীয়দের দ্বারাই মূলত পরিচালিত হয়ে আসছে এই মন্দিরের কালী পুজো। এবারও হচ্ছে সেই আয়োজন। জানালেন মন্দিরের পুরোহিত সুভাষ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাম আমলে কিছু সাহায্যে পেলেও এই আমলেও কোনো সাহায্যই পাইনি। অথচ হঠাৎ এক সাধু এসে বসে থাকায় ভামরি দেবী মন্দির বিখ্যাত হয়ে গেল!’ ২৭৫ বছরের এই মায়ের মন্দিরের সংস্কারও হল না। আক্ষেপ মন্দির কমিটিরও।
তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এই কালী মন্দির হলো ডাকাত কালী মন্দির তথা দেবী চৌধুরানী শ্মশান কালী মন্দির।
শতাব্দীপ্রাচীন জলপাইগুড়ির দেবী চৌধুরানী শ্মশানকালী মন্দিরের ঐতিহাসিক পেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ। এবার প্রায় ৩০০ vবছরে পদার্পণ করতে চলেছে এই মন্দিরের পূজা। এই পুজো হয় শ্যামা পূজার দিন। সেজন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মন্দির পরিষ্কার করার কাজ চলছে। দূর দূরান্ত থেকে ভক্তগণ আসেন এখানে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে ভিড় জমান মন্দিরে।কালী পূজার পাশাপাশি এখানে শিবের আরাধনাও হয়। পূজার দিন মায়ের জন্য ভোগ নিবেদন হয়। দেবীকে তিস্তার মহাশোল মাছ ও বোয়াল মাছ দেওয়া হয়। সুরা দিয়ে মাকে স্নান করানো হয়। মায়ের এক হাতে সুরার পাত্র, অন্য হাতে নরমুন্ডু। রাতভর চলে পুজো।
বঙ্কিমচন্দ্রের বিখ্যাত উপন্যাস ‘দেবী চৌধুরানী’তে এই অঞ্চলের কাহিনি বর্ণিত। এখনও এ অঞ্চলে দেবী চৌধুরানী ও ভবানী পাঠকের নামে নানা মিথ প্রচলিত। সাধারণ মানুষের মধ্যে এঁদের জনপ্রিয়তাও দেখার মতো। যদিও অনেকেই বলেন, প্রকৃত ঘটনা যা, বঙ্কিম তাঁর উপন্যাসে সেভাবে সেটা অনুসরণ করেননি। তবুও মূলত বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের সূত্রেই এই মন্দিরটি পরবর্তী সময়ে বিখ্যাত হয়। আজও মানুষের আগ্রহ রয়েছে।
তারই মাঝে, জলপাইগুড়ির গোশালা মোড়ে জাতীয় সড়কের ধারে প্রায় তিনশো বছরের পুরনো এই মন্দির। স্থানীয়দের দাবি, শক্তির উপসানার পর ডাকাতি করতে বেরোতেন দেবী চৌধুরানি। কথিত আছে, একসময় করোলা নদীর ঘাট থেকে মন্দিরের গর্ভগৃহ পর্যন্ত মাটির নীচে সুড়ঙ্গ ছিল।
দেবী চৌধুরানীর সময় থেকেই এই বিগ্রহের আরাধনা হয়ে আসছে। এখানে, দেবীর দুটি হাত। প্রত্যেক অমাবস্যাতেই এখানে শ্মশানকালীর পুজো হয়। কালীপুজোয় এখানে আগে বলি প্রথার প্রচলন ছিল। কিন্তু বর্তমানে আইনের নিষেধাজ্ঞায় সেটি বন্ধ রয়েছে।
এখানে ভোগে থাকে, সাদা ভাত, পাঁচ রকম ভাজা, শাক ভাজা, শোল মাছ, পায়েস চাটনি ও মিষ্টি!!
করোনাকালে, এবারও পাঁচ জনের বেশি ভক্তকে মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না। বিলি করা হতনা ভোগও!
দেবী চৌধুরানী বজরা করে এখানে এসে সুড়ঙ্গপথে কালী মন্দিরে!
প্রায় তিনশো বছরের পুরনো, জলপাইগুড়ির দেবী চৌধুরানির এই শ্মশানকালীর মন্দির হলেও অনেকে মনে করেন তার অনেক বছর আগে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। পুরনো রীতি মেনেই কালীপুজো হয় এখানে।
দেবী চৌধুরানী বজরা করে এখানে এসে সুড়ঙ্গপথে সোজা মন্দিরে প্রবেশ করতেন। মন্দিরের গর্ভগৃহেই রাখা হত লুঠ করে আনা সামগ্রী। জলপাইগুড়ির এই মন্দির ঘিরে নানা ইতিহাস আর জনশ্রুতি রয়েছে।
ব্রিটিশ সরকারের গোয়েন্দা ও পুলিশ তক্কে তক্কে থাকতো রানী দেবী চৌধুরানী গ্রেপ্তার করার জন্য। পুরো এলাকা জুড়ে তার জন্য তল্লাশি চালনো হতো। বৃটিশের চোখে ধুলো দিতেই দেবী চৌধুরানী করলা নদীর পার্শ্ববর্তী জঙ্গলের ধার দিয়ে বজরা নিয়ে মন্দিরের কাছাকাছি এসে সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে মন্দিরে ঢুকতেন। তার এবং ভবানী পাঠকের ডাকাতির টাকা ও সোনা মন্দিরে জমা রাখা হতো এবং গোপনে বিপ্লবীদের হাতে তুলে দেওয়া হতো।।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস আনন্দমঠে ভবানী পাঠক এবং দেবী চৌধুরানীর যে উল্লেখ রয়েছে, স্থানীয় মানুষরা মনে করেন, এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই ভবানী পাঠক! দেবী চৌধুরানির শ্মশানকালীর মন্দির! চা বাগান ঘেরা ছোট্ট গ্রাম! গ্রামের একপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে করোলা নদী।
এছাড়াও জলপাইগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে যোগমায়া কালী মন্দির এবং রায়কত পড়ার কালী পুজো দেখতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ হাজির হয়ে থাকেন।