নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থীতা নিয়ে ধোয়াশা যেন কাটছেই না। আনুষ্ঠানিকভাবে একজন প্রার্থী মাসুদুজ্জামানের নাম ঘোষণার পরও মনোনয়ন বঞ্চিত দুই প্রার্থী দাবি করেছেন, তারাই আসনটিতে মনোনয়ন পেয়েছেন। কয়েকদিন আগে গত শনিবার মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান নিজেকে আসনটিতে ধানের শীষের প্রার্থী বলে দাবি করে প্রচারণা চালিয়েছেন। এবং দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন বলে ব্যপক প্রচারণায় অংশ নেশার ২দিন যেতে না যেতেই।
আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ আবুল কালামও দলীয় মনোনয়ন ফরমের একটি কাগজ দেখিয়ে দাবি করছেন, তিনিই এ আসনটিতে ধানের শীষে মনোনীত হয়েছেন।
যদিও গত ৩রা নভেম্বর স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাদেশে যখন ২৩৭ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণার সময় আসনটিতে দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাসুদুজ্জামান মাসুদের নাম ঘোষণা করেন।
কিন্তু এতো কিছু পরও বিপত্তি বাঁধে গত ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে হঠাৎ করেই মাসুদুজ্জামানের জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেওয়ার পর। তিনি ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পরিবারের সদস্যরা তার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করায় তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন।
এ ঘোষান পর থেকে এ বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি বিএনপির নেতা-কর্মীরাসহ স্থানীয় জনসাধারণ। তারা তাৎক্ষনিক প্রতিবাদও জানান।
পরবর্তীতে মাসুদুজ্জামানকে নির্বাচনী মাঠে ফেরাতে দলীয় নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ ও ঘেরাও কর্মসূচীর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের মাধ্যমে মাসুদুজ্জামানকে ফের নির্বাচনে ফেরাতে রাজি করান। এমনকি প্রার্থীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে জড়ো হয়েও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। পরে ১৯ ডিসেম্বর নেতা-কর্মীদের অনুরোধে নির্বাচনী মাঠে ফেরার ঘোষণা দেন এই মনোনীত ধানের শীষের কান্ডারী মাসুদুজ্জামান। তিনি এরপর আবারও মাঠে গণসংযোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
কিন্তু মাসুদুজ্জামানের নির্বাচনী মাঠে ফেরার ঘোষণার পরদিনই সাখাওয়াত হোসেন খান দাবি করেন, দল তাকে আসনটিতে নির্বাচন করার নির্দেশনা দিয়েছে। তিনিই এখন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী।
তার এই দাবির পরপরই দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা যায়। এই বিভ্রান্তি কাটতে না কাটতেই, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ফের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম দাবি করেন, তিনি এ আসনটিতে ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন, দল মনোনীত করেছেন।
এর পরবর্তীতে কালামের অনুসারী নেতা-কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলীয় প্যাডে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে আবুল কালামের নাম উল্লেখিত একটি কাগজও ছড়িয়ে দেন। ওই কাগজটিতে গত ১৮ ডিসেম্বরের তারিখ উল্লেখ থাকলেও সেটি প্রকাশ পায় ছয়দিন পর। এতে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে আবারও বিভ্রান্তির মাত্রা আরও বাড়ে। এমনকি সাধারণ ভোটাররাও এ নিয়ে দ্বিধান্বিত। আসনটিতে আসলে ধানের শীষের কান্ডারি কে? তা এখনো পরিষ্কার হয়নি। নেতাকর্মী ও জনসাধারণের মধ্যে ধোয়াশাই রয়ে গেছে।
তবে, মাসুদুজ্জামান মাসুদ এক স্ট্যাটাসে নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করে ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ জানান।এ নিয়ে তার অনুসারী নেতাদের দাবি, আনুষ্ঠানিকভাবে দল মাসুদুজ্জামান মাসুদের নাম ঘোষণা করেছে। তারপর দুই নেতা দাবি করলেও তাদের বিষয়ে দল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা দেয়নি। সে বিবেচনায় এখনো আসনটিতে ধানের শীষের প্রার্থী মাসুদুজ্জামানই।
এ ঘটনায়, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খানও বলেন, “কে ফাইনাল এইটা সেন্ট্রাল জানে। সেন্ট্রাল থেকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তখনই আসনটিতে কে চূড়ান্ত প্রার্থী তা সবাই জানতে পারবে।” এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু ফেসবুক লাইভে এসে সকলকে বিভ্রান্ত না হয়ে ধৈর্য ধরার আহবান জানিয়েছেন।
