ফেরদৌস আলম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি।।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্সের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামলেও, প্রাণিসম্পদ বিভাগের একটি চক্রের জন্য এটি পরিণত হয়েছে 'সোনার হরিণ' শিকারের মৌসুমে। সরকারি ভ্যাকসিনের দাম মাত্র ৮০ পয়সা, কিন্তু মাঠে এর দাম চড়ছে বিশ থেকে ত্রিশ টাকা। এই মূল্যস্ফীতির পেছনে কোন যুক্তি নেই, আছে শুধুই এক অদৃশ্য সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভ্যাকসিন দলের সদস্যরা মোটরসাইকেল নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভ্যাকসিনের নামে 'চাঁদা' তুলছেন। তারা সরাসরি হুমকি দিচ্ছেন, "অফিসে গেলে আরও বেশি লাগবে, এখন দিলে সস্তায় পড়বে।" এই আতঙ্কের পরিবেশে সাধারণ খামারিরা বাধ্য হচ্ছেন এই 'মাফিয়া ট্যাক্স' দিতে।
মজিবর রহমান নামের এক ভ্যানচালক বলেন, "গরু বাঁচানোর জন্য আমরা প্রস্তুত, কিন্তু এই লুটেরাদের হাত থেকে কে বাঁচাবে আমাদের?" তার এই প্রশ্ন যেন সমগ্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক তীব্র অভিযোগ।
চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, ভ্যাকসিনের এই 'বেসরকারি মূল্য' নিয়ে প্রশাসনের মধ্যেই চলছে দ্বিমত। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা স্বীকার করছেন ১০ টাকা নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু ইউএনও বলছেন এটি তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এই দ্বিধাবিভক্তিই প্রমাণ করে যে ব্যবস্থাটি কতটা নিয়ন্ত্রণহীন।
সুন্দরগঞ্জে মোট গবাদি পশুর সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ, কিন্তু ভ্যাকসিন এসেছে মাত্র ২৬ হাজার ৪০০ ডোজ। এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিনের অভাবে পশু মরবে নাকি দাম দিয়ে কিনবে - এই দ্বিধায় পড়েছে সাধারণ মানুষ।
এখানে চিকিৎসার নামে চলছে শোষণ, সেবার আড়ালে লুটপাট। স্থানীয় এক যুবকের কথায়, "অ্যানথ্রাক্সে মরবে নাকি ভ্যাকসিনের দাম দিয়ে দিয়ে সর্বস্বান্ত হবো - এই দুর্ভোগের কোনটা বেছে নেব, তা নিয়ে আমরা বিভ্রান্ত।"
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, ভ্যাকসিন কার্যক্রম আসলে কার জন্য? গবাদি পশুর জন্য, নাকি কিছু অসাধু কর্মকর্তার ভরপেট খাওয়ার জন্য? সুন্দরগঞ্জের মাঠে-ঘাটে আজ এই প্রশ্নই সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।