ফেরদৌস আলম, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চরম জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা প্রায় বিকল হয়ে পড়েছে। গাইনোকলজি ও অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সিজারিয়ান অপারেশন, যা স্থানীয় প্রসূতি মায়েদের জন্য তৈরি করেছে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ৫০ শয্যার হলেও বর্তমানে জনবল রয়েছে ৩১ শয্যার মতো। গাইনোকলজি, মেডিসিন, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগে জুনিয়র কনসালট্যান্টের ১১টি পদের মধ্যে ১০টিই শূন্য থাকায় রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাও ব্যাহত হচ্ছে।
উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ৯টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৪ জন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, স্বাস্থ্য সহকারী, ফার্মাসিস্টসহ মোট ৪৮টি পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি থাকায় স্বাস্থ্যসেবার মান দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।
ফুলছড়ি উপজেলার সাত ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র এবং এই হাসপাতালটিই তাদের প্রধান স্বাস্থ্যসেবার ভরসা। শুধু ফুলছড়ি নয়, পার্শ্ববর্তী সাঘাটা ও সদর উপজেলার বহু মানুষও এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে অনেক রোগীকেই গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
উদাখালী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দিন বলেন, "গাইনি ডাক্তার না থাকায় গর্ভবতী মায়েরা প্রয়োজনীয় প্রসবপূর্ব স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সিজার বন্ধ থাকায় জটিল প্রসবের ক্ষেত্রে তাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে।"
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রুহুল আমিন মিয়া জানান, বহির্বিভাগে মাসে গড়ে ১০ হাজার রোগী, জরুরি বিভাগে দেড় হাজার এবং আন্তঃবিভাগে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জামের অভাবে পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম তানভীর রহমান বলেন, "গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় সিজারিয়ান অপারেশন চালু করা যাচ্ছে না। জনবল সংকট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।"
স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক নিয়োগ পেলে সিজারিয়ানসহ জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পুনরায় চালু হবে এবং সাধারণ মানুষ আবারও এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পেতে সক্ষম হবেন।