ফেরদৌস আলম, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তাদের খেলার মাঠ জবরদখলের চেষ্টাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। স্থানীয় এক ভূমিদস্যু চক্রের ক্রমাগত উৎপাত ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় (২৪ সেপ্টেম্বর) বুধবার সকালে অনুষ্ঠিত হয় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ।
সাঁওতাল পল্লী কাটাবাড়ী ইউনিয়ন থেকে নারী-পুরুষের সমন্বয়ে গঠিত এক বিক্ষোভকারী দল তীর-ধনুক সহকারে একটি বিস্তৃত মিছিল বের করে। এটি তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীকী প্রকাশ হিসেবে দেখা হয়েছে। মিছিলটি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহরের দিকে অগ্রসর হয় এবং শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে সমাবেশে রূপ নেয়।
প্রতিবাদকারীদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানার কাছে হস্তান্তরিত স্মারকলিপিতে ভূমিদস্যুদের একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়।
অভিযোগ অনুসারে, আতাউর রহমান সাবু নামক এক ব্যক্তি ও তার দলবল শিশুদের স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। তারা ইতিমধ্যেই স্কুল সংলগ্ন খেলার মাঠটি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে, যার ফলে শতাধিক আদিবাসী শিশুর স্বাভাবিক খেলাধুলা ও শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আরও গুরুতর অভিযোগ হিসেবে উঠে এসেছে স্কুলের ভেতরের আসবাবপত্র ইচ্ছেকৃতভাবে ভাঙচুর বা নষ্ট করা এবং শিশুদের অভিভাবকদেরকে সরাসরি হুমকি দেওয়ার ঘটনা। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে স্কুল পরিবেশ ভয় ও অনিশ্চয়তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।
স্মারকলিপিতে বিক্ষোভকারীরা তিনটি সুনির্দিষ্ট দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো: অভিযুক্ত ভূমিদস্যুদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ও খেলার মাঠকে সকল প্রকার দখলমুক্ত করে শিশুদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাসক। সমাবেশে বক্তারা তাদের বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন যে, শিক্ষা ও খেলাধুলা হলো প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার, এবং এই অধিকার হরণ করার কোনো প্রচেষ্টাই বরদাস্ত করা হবে না। তারা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, অতীতেও একই বিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছিল, কিন্তু তেমন কোনো সুরাহা হয়নি। এবার তাদের দাবির প্রতি যথাযথ মনোযোগ না দিলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর ও বিস্তৃত আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এ ঘটনা টি গাইবান্ধা অঞ্চলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের জমি ও সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের একটি জটিল সমস্যার বহিঃপ্রকাশ বলে স্থানীয় নেতাদের ধারণা।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ভূমি বিরোধ নিয়ে এই অঞ্চলে উত্তেজনা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউএনও অফিসের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, তারা বিষয়টি তদন্তের আওতায় এনেছেন বলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত তাদের এক প্রতিনিধি জানান।
এই ঘটনাটি স্থানীয় প্রশাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে, অন্যদিকে একটি প্রান্তিক সম্প্রদায়ের ন্যায্য অধিকার রক্ষা করতে হবে। সকলের দৃষ্টি এখন প্রশাসনের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের দিকে। আদিবাসী শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা ও বিকাশের পরিবেশ ফিরে পেতে দ্রুত ও গঠনমূলক পদক্ষেপের আশা করছেন স্থানীয় জনগণ।