প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১৯, ২০২৫, ৮:৫৯ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ১৯, ২০২৫, ৫:০৮ এ.এম
কুষ্টিয়া বৃদ্ধাশ্রমের বদ্ধ ঘরে আধপেট খেয়ে রোজা রাখছেন ৩০ অসহায় মা

হৃদয় রায়হান,কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।
‘গরিব মানুষ, ট্যাকা পয়সা না থাকলেও খুব আদর করেই ছেলে মানুষ করছিলাম। বড় হওয়ার পর সেই ছাওয়ালের কাছেই এখন বোঝা হয়ে গেছি।’
এভাবেই নিজের কষ্টের কথা বলছিলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ক্যানাল পাড়া এলাকার ৭৫ বছর বয়সী আমেনা খাতুন। স্বামীর মৃত্যুর পর আমেনা খাতুনের ঠাঁই হয়েছে কুষ্টিয়া শহরের উদয় মা ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র নামে একটি বৃদ্ধাশ্রমে। সেখানে বসেই মা একমাত্র সন্তানের জন্য চোখের পানি ফেলেন এবং তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন। ৯ মাস গর্ভে ধারণ করে যে সন্তানকে পরম মমতায় লালন করে কর্মক্ষম করে তুলেছেন, স্বামীর মৃত্যুর পর সেই ছেলে আর পুত্রবধূর কাছেই বোঝা হয়ে যান আমেনা। ভ্যানচালক ছেলে আয় করে পরিবারের সবার খরচ চালাতে পারলেও হাঁপিয়ে ওঠেন মায়ের সামান্য কিছু ওষুধ কেনার টাকা দিতে। বৃদ্ধা শাশুড়ির সামনে ভাত বেড়ে দিতে কষ্ট হয় একমাত্র পুত্রবধূর। আমেনা বলেন, এখানে আসার আগে অনেক দিনই না খেয়ে দিন পার করতে হয়েছে। তাই না খেয়ে থাকলে বা আধা পেট খেয়ে রোজা থাকলে বেশি কষ্ট লাগে না, কষ্ট লাগে সন্তান এবং পরিবারের কথা মনে পড়লে। তিনি বলেন, যখন স্বামী বেঁচে ছিল, রোজায় সবাই একসঙ্গে ইফতার করতে বসতাম। যাই থাকতো স্বামী-সন্তান নিয়ে ভাগ করে খেতাম। কিন্তু এখন সেসব কেবলই স্মৃতি।
আমেনা খাতুন বলেন, শেষ বয়সে চাওয়া পাওয়ারতো কিছুই নেই। তবে সন্তানের কাছে থাকতে পারলে ভালো লাগতো, বেশি খারাপ লাগে ঈদের দিন। কিন্তু আমি থাকলে তাদের কষ্ট হয়, তাই এখানেই পড়ে থাকি। ওরাতো ভালো থাকুক।
কুষ্টিয়ার এই বৃদ্ধাশ্রমে থাকা ৩০ জন মায়ের প্রতিটি মুহূর্ত কাটে নিজের সংসারে কাটানো সোনালি দিনের কথা মনে করে। বৃদ্ধাশ্রমের জরাজীর্ণ বদ্ধ ঘরেই কোনো রকম মাথা গুঁজে কাটছে তাদের জীবন। কথা হয় গত দশ বছর ধরে এই বৃদ্ধাশ্রমে থাকা ৭৭ বছর বয়সী আয়েশা খাতুনের সঙ্গে। আয়েশা খাতুনের বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উদিবাড়ী এলাকায়। এক সময় তার স্বামী সংসার সবই ছিল। ছিল না শুধু সন্তান। এরমধ্যেই বিধাতার ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে চলে যান আয়েশা খাতুনের স্বামী ইমতিয়াজ আলী। এর কিছুদিন পরই নিজের দুই ভাই প্রতারণার মাধ্যমে তার নামে থাকা অল্প কিছু জমি লিখে নেন। স্বামীর বাড়ির কোনো সম্পত্তির ভাগও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি তাকে। তাই আয়েশার শেষ আশ্রয়স্থল হয়েছে এই বৃদ্ধাশ্রম। চোখের জলে এখানে বসেই দিন পার করছেন আয়েশা। বৃদ্ধাশ্রমে থাকলেও অনেকের আত্মীয় স্বজন দেখতে আসেন। কিন্তু আয়েশাকে দেখতে কেউ আসে না। আয়েশার খবর নিতে আসে না কেউ। এখন আর কষ্ট হয় না আয়েশার। আপন করে নিয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমের সবাইকে। তারাই এখন আয়েশার আপনজন।
আয়েশা বলেন, রোজা হোক বা ঈদ, একসময় খুব আনন্দে কাটিয়েছি। কিন্তু এখন আমার কেউ নেই। যখন সেহরি খাওয়ার জন্য মসজিদের মাইকে সবাইকে ডাকাডাকি করে, তখন বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। পরিবার পরিজনের কথা তখন খুব মনে পড়ে।
৩০ জন মায়ের থাকার জন্য বৃদ্ধাশ্রমটিতে রয়েছে মাত্র ৪টি রুম। যেগুলো ভাড়া নেওয়া। পুরোনো জরাজীর্ণ ঘরে কোনো রকম ঠাসাঠাসি করে থাকতে হয় তাদের। বাড়ির সামনে নেই কোনো হাঁটা-চলার জায়গা। নেই কোনো আধুনিক সুযোগ সুবিধা, পর্যাপ্ত শীত বস্ত্র বা পরিধানের কাপড়। খাদ্য, চিকিৎসাসহ নানা সংকটের মধ্য দিয়েই কোনোরকম কাটছে এসব মায়েদের সময়।
ব্যক্তি মালিকানার একটি জমিতে তাদের একুট হাঁটা-চলার ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে সেই জমিটি ঘিরে সেখানে বহুতল ভবনের কাজ শুরু করেছেন জমির মালিক।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কেউ বসে আছেন, কেউ রান্নার জন্য লাকড়ি কেটে প্রস্তুত করছেন। কেউ আবার বসে হাদিসের বই পড়ছেন। কয়েকজন রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। স্যাঁৎস্যাঁতে পুরোনো একটি বাড়ির দরজা জানালার ঠিক নেই। খসে পড়েছে দেওয়ালের পলেস্তারা। শুকনো মৌসুমেও সেখানে ঢোকার পথ ভিজে কাদা হয়ে আছে পাশের বাড়ি থেকে আসা মোটরের পানিতে। এর মধ্যেই চলাফেরা করতে হয় বৃদ্ধ মায়েদের। সেখানেই কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে।
তারা বলেন, এখানে আমরা নিজেদের সংসার গড়ে নিয়েছি। কিন্তু আমাদের মাথা গোঁজার কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই। বাড়িওয়ালা মাঝে মধ্যেই বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে। তারপরও এখানকার দায়িত্বে যারা আছে তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করে আমাদের জন্য। পারুলা বেগম বলেন, এখানে আমরা ৩০ জন অসহায় নারী থাকি। সঙ্গে এই জায়গার (প্রতিষ্ঠানের) আরও দুইজনসহ মোট ৩২ জন। এই ৩২ জনের তিন বেলার খাবার দেওয়া হয়। খুব ভালো খাবার না পেলেও, যা পাই তা খেয়ে কোনো রকম বেঁচে থাকা যায়। বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নানাবিধ সংকটে পড়েছেন বলে জানায় বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কমে গেছে সাহায্য সহযোগিতার পরিমাণও। তাই বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মায়েদের তিন বেলার খাবার যোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এসব অসহায় মায়েদের ভালোভাবে রাখতে সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আফরোজা ইসলাম। এতগুলো মানুষের থাকাসহ প্রতিদিনের ব্যয় কীভাবে নির্বাহ হয় এমন প্রশ্নের জবাবে উদয় মা ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ইফতেখার হোসেন মিঠু বলেন, সবকিছুই আল্লাহ চালিয়ে নিচ্ছেন। কারণ বর্তমান সময়ে বাজারের যে ঊর্ধ্বগতি, সেইসঙ্গে কমেছে সাহায্য সহযোগিতার পরিমাণও। তারপরও অতিকষ্টে এখানকার মায়েদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছি। তিনি এক টুকরো সরকারি জায়গা এই প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।
◑ Chief Adviser-☞ Abu Jafor Ahamed babul ◑ Adviser☞ Mohammad Kamrul Islam
◑Editor & publisher-☞ Mohammad Islam ✪Head office:-Motijheel C/A, Dhaka-1212,
✪Corporate office:-B.B Road ,Chasara, Narayanganj-1400, ✆Tell-02-47650077,02-2244272 Cell:+88-01885-000126
◑web:www.samakalinkagoj.com. ✪For news:(Online & Print)samakalinkagojnews@gmail.com,
✪For advertisements:-ads.samakalinkagoj@gmail.com✪For Editor & publisher:-editorsamakalinkagoj@gmail.com.✆Cell: +8801754-605090(Editor)☞Instagram.com/samakalinkagoj ☞ twitter.com/samakalinkagoj
☞সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক ১৮০,ফকিরাপুল পানির টাংকির গলি,মতিঝিল বা/এ, ঢাকা অবস্থিত 'জননী প্রিন্টার্স' ছাপাখানা হতে মুদ্রিত, ✪ রেজি ডি/এ নং-৬৭৭৭
◑ All Rights Reserved ©Daily samakalin kagoj paper authority>(© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ©দৈনিক সমকালীন কাগজ পত্রিকা কর্তৃপক্ষ)
Copyright © 2025 Daily Samakalin Kagoj. All rights reserved.