প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২১, ২০২৪, ৩:৫৬ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১৩, ২০২৪, ৬:০০ পি.এম
ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা প্রতিনিধি।।
অতীতে দুর্গা পুজা ছিল প্রকৃতপক্ষে পুজোর সঙ্গে এক মহামিলনের উৎসব। নিষ্ঠাভরে হতো পুজা।
ধীরেধীরে সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সেই অতীতের ঐতিহ্য আজ আর নেই। এখন দুর্গা পুজা আন্তরিকভাবে পুজাকে ছড়িয়ে এক আতিশয্যে পরিণত হয়ে গেছে। বিশাল বিশাল প্রতিযোগিতা মুলক প্যান্ডেল। দীর্ঘ মাইলের পর মাইল আলোক সজ্জা, ল্যাম্প পোস্টের সঙ্গে দীর্ঘ এলাকা জুড়ে মাইক্রোফোন, বড় বড় পোস্টার,ফেস্টুন, বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং,রাস্তার দুই ধারে মাইল জুড়ে বাঁশের ব্যারিকেট এবং আরো কতো কী!! এতে কিন্তু পূজার আসল নিষ্ঠার অনেকটা অভাব আছে।
আসল কথাটা হলো," দেখো আমরা কতো এগিয়ে"। এমন হাজার হাজার পুজা হচ্ছে মহানগর কলকাতায়। মুখ্য মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা রাজ্যের ২২ হাজার ক্লাবের উৎসবের জন্য প্রত্যেককে ৮৫ হাজার টাকার সরকারি অনুদান দিয়েছেন উৎসবকে মুখরিত করে তোলার জন্য।
রাজ্য ছাপিয়ে দেশ বিদেশের কোটি কোটি মানুষ দুর্গা পূজা দেখতে ছুটে আসেন কলকাতায়। সকলের নজর মূর্তির সৌদর্য, লাইটিং, মণ্ডপ সজ্জা ইত্যাদি। এজন্য সরকার এবং কয়েকটি সংস্থা থেকে প্রথম,দ্বিতীয়,তৃতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে । কিন্তু আসল পুজা দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায়। দর্শনার্থীরাও নিজেদের অঙ্গসজ্জা, রকমারি পোশাক পড়ে অপরকে দেখাতে চায় ,আকর্ষণ করতে চায়। এই কোটি কোটি মানুষের এই ভিড়ে হারিয়ে যায় লক্ষ লক্ষ মলিন, ছেঁড়া কাপড় পড়া ফুটপাথ বাসী ও ভিখারীরা। একটা বিশাল ব্যবধান।
আর এই ব্যবাধানকে ঘুচিয়ে
শ্যামবাজারের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সমাজসেবী খোকন দাস এক নজির সৃষ্টি করেছেন গত ১০ বছর ধরে। বিশাল দুর্গা মূর্তি থাকলেও কোন আতিশয্য নেই। তার পুজা মন্ডপের আসে পাশে কমকরেও ৫ টি বসতি রয়েছে। রয়েছে ফুটপাথের কয়েকশ দরিদ্র মানুষ ও ভিখারী।
পুজার চারদিন ধরে সকালে ঢাক বাজিয়ে পুজা শুরুর পর মাইকে প্রসাদ বিতরনের ঘোষণা করা হয়। তার আগেই বিশাল রাস্তা জুড়ে পাতা হয় বেঞ্চের পর বেঞ্চ। প্রসাদ হিসাবে দেওয়া হয়, ফল, লুচি,তরকারি, মিষ্টি। ব্যাচের পর ব্যাচ প্রসাদ খেতে ভিড় করেন ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষ। এর পর দুপুরে ভাত, ডাল, লাবড়া, ভাজা, পনিরের সবজি এবং পায়েশ। অষ্টমীর দিন দুপুরে পোলাউ দেয়া হয় ভাতের বদলে। নবমীর দিন মাংস ও পোলাউ।
রাত্রে দৈনিক খিচুড়ি,ব্রেড, আলুরদম, ভাজা, মিষ্টি ইত্যাদি। এটা চলে লাগাতার ৫ দিন।
আমি দেখেছি খোকন দাস নিজে পরিবেশনের সূত্রপাত করেন। একহাজার মানুষকে পরিবেশন করার পর অন্যান্যদের দায়িত্ব দেন। দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা তারা শুধু খাচ্ছেন না আবার এদের মধ্যে অনেক বাহুবলী পোটলা বেঁধে অনেক খাবার নিয়েও যাচ্ছেন।
পুজার চারদিন বস্তির কোন পরিবার,ফুটপাথের পরিবারকে ঘরে রান্না করতে হয় না। ভিখারীদেরও রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করতে হয় না।
এটাই শুধু নয়, কালী পুজা,বিশ্বকর্মা পুজা, গণেশ পুজা, জগন্নাথ দেবের পুজাও করে থাকেন খোকন দাস। সব পুজাতেই একই দৃশ্য। কী করে এই ভিড় কে সামাল দেন?
খোকন বাবু বলেন,আমি ধর্মে বিশ্বাসী। তবে ধর্মের নামে ভাঁড়ামিতে নয়। যদি ঈশ্বর,আল্লাহর প্রতি প্রকৃত ভক্তি দেখাতে চাও তবে তাঁর সৃষ্ট জীবকে সেবা করার মাধ্যমে সেটা করো। এটা আমার বাবা আমাকে বলে গেছেন। আমি নিজের হাতে এদের প্রসাদ বিতরণ করে মনে করি ঈশ্বরকে বিতরণ করছি। আমার পুত্র শিবমও একই ভাবে সকাল থেকে ব্যস্ত থাকে মানুষের সেবার কাজে। "
দেখলাম শিবম তখন ভিড়ের মধ্যে প্রসাদ বিতরণে ব্যস্ত। ছোট্ট ছেলে। মিষ্টি ছেলে।
এখানেই শেষ নয়। পুজার আগে ষষ্ঠীর দিন লরি বোঝাই জমা কাপড় এনে মঞ্চে জড় করা হয়। মাইকে ঘোষণা করা হয়। ফুটপাথ এবং বস্তির মানুষকে পুজোর পোশাক সংগ্রহ করার আবেদন করা হয়। খোকন দাস নিজে এবং এলাকার বিরাট মাপের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অতীন ঘোষকে দিয়ে পোশাক বিতরণ করেন। শাড়ি, শার্ট,গেঞ্জি, লুঙ্গি সাজানো থাকে। লোক বুঝে তুলে দেওয়া হয়।
প্রশ্ন করেছিলাম, পুজোয় লুঙ্গি কেনো? তিনি বলেন, বস্তিতে এবং ফুটপাথে তো শুধু হিন্দুরাই থাকেন না। মুসলমানেরাও থাকেন। তাই সকলের কথা ভেবে লুঙ্গি,গেঞ্জি রাখতেও হয়। কথাটা শুনে খুব ভালো লাগছিল।
এতো মানুষকে খাওয়াতে মোট ৬ জন রাঁধুনিকে হিমসিম খেতে হয়। তারা সারাদিন ধরে রেধেই চলেছেন। খোকন বাবুর এই মানব সেবা সত্বেও কেন তিনি একবারও ভোটে দাঁড়ান নি? জবাবে বলেন,সেদিকটা ভাবিনি। তাছাড়া ডাক থেকে কখনো ডাক আসে নি।
ভাবতে অদ্ভুত লাগে, এই পাড়ায় যারাই পরিষাদ , তারা কেউ কখনও এভাবে মানুষের সেবা করেন নি। দল তাদের টিকিট দেয় নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য। অথচ খোকন দাসকে কখনো সেই সুযোগ দেওয়া হয় না। এর পিছনে রহস্যটা অজানা নয়। সেবা বড় কথা নয়, তাবেদারী করতে পারলেই রাজনীতিতে সফল হওয়া যায়।
Editor & Publisher-MSI
Head office:-Motijheel C/A, Dhaka-1212,
Corporate office:-B.B Road ,Chasara, Narayanganj-1400, Tell-02-47650077,02-2244272 Cell:+88-01885-000124,01885-000126
web:www.samakalinkagoj.com. For news:(Online & Print)
samakalinkagojnews@gmail.com, news.samakalinkagoj@gmail.com
For advertisements:-ads.samakalinkagoj@gmail.com
For publisher & editor:-editorsamakalinkagoj@gmail.com. Cell: +8801754-605090(Editor)
☞Instagram.com/samakalinkagoj ☞ twitter.com/samakalinkagoj
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক ১৮০,ফকিরাপুল পানির টাংকির গলি,মতিঝিল বা/এ, ঢাকা অবস্থিত 'জননী প্রিন্টার্স' ছাপাখানা হতে মুদ্রিত, ✪ রেজি ডি/এ নং-৬৭৭৭
© All Rights Reserved ©Daily samakalin kagoj paper authority>(© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ©দৈনিক সমকালীন কাগজ পত্রিকা কর্তৃপক্ষ)
Copyright © 2024 Samakalin Kagoj. All rights reserved.