মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
বৈষম্যবিরোধে আন্দোলনে স্কুল ছাত্র তাওহিদের শরীরে বৃদ্ধ হয় ২২টি গুলি।এখনো তার শরীরে বহন করছেন ৭টি গুলি।দেড় মাসেরও অধিক সময় ধরে শরীরে এখনো ৭টি গুলি বহন করে চলেছে সে। চিকিৎসকরা অপারেশন করে ইতিমধ্যে তার শরীর হতে ১৫টি গুলি বের করে এনেছেন।তাওহিদ মুন্সীগঞ্জের টংঙ্গীবাড়ী উপজেলার বালিগাওঁ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে।সে বালিগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র।তার বাবা আবুল কালাম পেশায় একজন কৃষক।তাওহিদ গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মুন্সীগঞ্জ সুপার মার্কেট এলাকায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।ওই আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ তাদের ওপর গুলি ছুড়লে তাওহিদের দু চোখ-কান কপাল মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে মোট ২২টি গুলিবিদ্ধ হয়।চোখে গুলিবিদ্ধ হওয়ার দু-চোখে কোন কিছুই দেখছিলোনা সে।চোখ দিয়ে ঝড়ছিল রক্ত।মুহুমুহু গুলির শব্দে বাচঁতে চোখ বুজেঁই রাস্তা দিয়ে দৌড়াচ্ছিলো।পরে তার গুলিবৃদ্ধ অবস্থা দেখতে পেয়ে অন্যা আন্দোলনকারীরা তাকে নিয়ে যায় মুন্সীগঞ্জের গোয়লপাড়ায় নাসরিন বেগম নামের এক নারীর বাসায়।সে সময় হাসপাতাল এলাকাসহ বিভিন্নস্থানে পুলিশ ও সরকার দলীয় লোকজনের হামলা চলছিল।তাই তাওহিদকে ডাক্তার দেখানো সম্ভব হয়নি।ওই বাড়িতেই মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল সে।বিনা চিকিৎসায় সারাদিন ও একরাত আতঙ্ক ভয়ে পুরো রাত জেগে কাটে তার এদিকে ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পান তার বাবা আবুল কালাম।ছেলেকে দেখতে ছেলের আশ্রয় নেওয়ার স্থানের কাছে এসেও একদিকে যানবাহন সংকট অন্যদিকে আশ্রয়দাতার বাধাঁর মুখে ওই সময় দেখতে পারেননি ছেলেকে। আশ্রয়দাতা নাসরিন বেগম ভয়ে সে সময় তাওহিদের বাবাকে তার বাড়ির ঠিকানা দেননি। তাছাড়া বারণ করেছিলেন তার বাড়িতে আসতে। কারণ তিনি ওই সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অনেকেই বাড়িতে গোপনে আশ্রয় দিয়েছিলেন।বিষয়টি জানাজানি হলে আটক হতে পারেন পুলিশের হাতে সে ভয়ে বার বার বাড়িতে আসতে নিষেধ করেন তাওহিদের বাবাকে।ঠিকানা না পেয়ে তাওহিদের বাবা ছেলের আশ্রয়দাতার বাড়ির আশে-পাশের স্থাণ দিয়ে ঘুরে ফিরে যান বাড়িতে।বাড়িতে ফিরে দেখেন স্ত্রী তাওহিদের মা ছেলের শোকে হার্ট অ্যাটাক করেছেন মুখ বাঁকা হয়ে গেছে তার।ডাক্তার দেখবেন ডাক্তারও পাচ্ছিলো না সে সময়।একদিকে ছেলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অন্য বাড়িতে আশ্রয়ে অন্যদিকে স্ত্রীর হার্ট অ্যাটাকে কাতর হয়ে পরেন মনির হোসেন।তারপরেও যোগাযোগ রাখছিলেন ছেলের আশ্রয়দাতা নাসরিন বেগমের সাথে।পরে নাসরিন বেগম বলেন ভোর রাত ৫টার দিকে সে সময় মানুষজন রাস্তাঘাটে ততো থাকেনা যদি তাওহিদের বাবা অন্য কোন মহিলাকে সাথে নিয়ে আশ্রয়দাতা নাসরিনের বাড়িতে যায় তবে গোপনে তাওহিদকে তুলে দিবেন তাদের হাতে।ছেলেকে পেতে আশ্রয়দাতার শর্ত অনুযায়ী ৫ আগষ্ট ভোর রাত ৪টার দিকে তাওহিদের চাচিকে সাথে নিয়ে ছুটে যান তাওহিদের বাবা ২০ কিলোমিটার দূরে আশ্রয়দাতার বাড়িতে।পরে আশ্রয়দাতা তাওহিদকে তুলে দেন তার পিতার হতে।৫ আগস্ট ভোরে তাওহিদকে নিয়ে তার বাবা চলে আসেন বাড়িতে। সে সময় চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ ছিলনা।তাই বাড়িতেই রেখে দেন ছেলেকে।পরে ৬ আগস্ট দেখেন ছেলের পেটে বৃদ্ধ গুলির স্থানগুলো পেকে সাদা হয়ে রয়েছে।মনির হোসেন নিজেই তাওহিদের পেটে চাপ দিয়ে বের করে আনেন ৪টি গুলি।পরে ৬ আগস্ট তারিখে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।কিন্তু ওই হাসপাতালে তাওহিদের শরীর হতে কোন গুলি বের করেনি।পরে ১৬ আগষ্ট তাকে নেওয়া হয় ঢাকাস্থ আগারগাঁওয়ের সেনাবাহিনী পরিচালিত সিএমএম হাসপাতালে ওখানে নেওয়ার পরে ১৭ আগস্ট ৩টা ২৪ আগস্ট ৪টা এভাবে মোট ১৫টি গুলি বের করা হয়।এখনো তাওহিদের শরীরে ৭টি গুলি রয়েছে।এ ব্যাপারে তাওহিদ বলেন,বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য গত ৪ আগস্ট তিন বন্ধুকে সাথে নিয়ে সকাল ৭টায় বাড়ি হতে বেরিয়ে পরি। মুন্সীগঞ্জ সদরের সুপার মার্কেট এলাকায় যাওয়ার পরে দেখি সে সময় অল্প কয়জন লোক হয়েছে। তখন পুলিশ কিছুতেই রাস্তায় আমাদের দাঁড়াতে দিচ্ছিলো না।পরে আমরা এদিক সেদিক ঘুড়াঘুড়ি করছিলাম।বেলা বাড়ার সাথে সাথে অনেক লোকজন আসতে থাকে।পরে আমরা মুন্সীগঞ্জ সুপার মার্কেট এলাকায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতে থাকি।বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে আমার শরীরে মোট ২২টি গুলি লাগে।আমার দু-চোখেও গুলি লাগায় আমি চোখে কিছুই দেখতেছিলামনা।তখন চারদিকে গুলির শব্দ হচ্ছিল।আমি ভয়ে রাস্তা দিয়ে চোখ বুজে দৌড়াচ্ছিলাম।গুলি লাগায় আমার চোখ দিয়ে রক্ত ঝড়ছিল।সে সময় অন্য আন্দোলনকারী বন্ধুরা আমাকে মুন্সীগঞ্জ শহরের গোয়লপাড়া গ্রামের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়।ওখানে নাসরিন বেগম নামের এক মহিলা আমাদের অনেক অন্দোলনকারীদের আশ্রয় দেয়।ওই ভদ্র মহিলার স্বামী বিদেশে থাকেন।ওনি আমাদের খুব কষ্টে বাড়ির মধ্যে লুকিয়ে রাখেন।একদিকে শরীরে যন্ত্রণা অন্যদিকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজনের ভয়ে খুব আতঙ্কে সময় কাটছিলো আমাদের। সারারাত ভয়ে আতঙ্কে কাটিয়ে দেই।পরে সকালে বাবা গিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে আমাকে।এসে দেখি মা হার্ট অ্যাটাক করেছে মুখ বাঁকা হয়ে আছে।পরে আমি বাবাকে বলি আমাকে বাইরে নিলে সমস্যা হতে পারে আমার কিছু হবেনা তুমি মাকে ডাক্তার দেখাও।বাবা মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়।পরে দুপুরে শুনি দেশ স্বাধীন হয়েছে আমরা মুক্ত হয়েছি। পরে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ও সিএমএম হাসপাতালে চিকিৎসা নেই।আমার দু-চোখে কপালে ও মাথায় এখনো ৭টি গুলি আছে। ডাক্তার বলছে আস্তে আস্তে বের করতে হবে।মাঝে মধ্যেই খুব যন্ত্রণা হয়।আমার চিকিৎসা চলছে।এ ব্যাপারে তাওহিদের বাবা মনির হোসেন বলেন, তাওহিদ আমাদের না বলেই আন্দোলনে গিয়েছিল। আমি বিষয়টি জানতাম না।গুলি লাগার পরে আমার ছোট ছেলে আমাকে বলে ভাইয়া আন্দোলনে গিয়ে গুলি খেয়েছে এক বাড়িতে আছে।আমি ছুটে যাই সেই বাড়ির কাছে।কিন্তু যে মহিলা ওকে আশ্রয় দিয়েছে সেই মহিলা আমাকে জানায় আপনি এখোন বাড়িতে আসলে আমার বিপদ হবে।তাছাড়া এখানে অনেক আন্দোলনকারীরা আছে তাদেরও বিপদ হবে।তাই আমি আমার ছেলের সাথে দেখাটাও করতে পারছিলাম না।পরে বাড়িতে ফিরে এসে দেখি স্ত্রী হার্ট অ্যাটাক করেছে।মুখ বাঁকা হয়ে গেছে।সব বন্ধ ডাক্তার দেখাবো সেই স্থানও নাই।আমি সবসময় আমার ছেলেকে আশ্রয় দেওয়া ওই মহিলার সাথে যোগাযোগ করছিলাম।মহিলা আমাকে ৫ তারিখ ভোর ৫টা বাঁজে তাওহিদের মায়ের বয়সী কাউকে নিয়ে যেতে বলে।পরে আমি তাওহিদের চাচিকে সাথে নিয়ে ওই বাড়িতে গেলে ওই মহিলা তাওহিদকে আমার হাতে তুলে দেয়।বাড়িতে এনে আমি তাওহিদকে ভয়ে চিকিৎসাও দিতে পারছিলাম না।নিজেই তাওহিদের পেটে বৃদ্ধ ৪ গুলি বের করে আনি।এখোন ওকে সিএমএম হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছি।ওর দুচোখে কপালে মাথায় এখনো ৭ গুলি রয়েছে।ডাক্তার বলছে একেক করে বের করবে।তিনি আরো বলেন,ওই সমস্ত গুলি বের করতে যদি টাকা পয়সা কম খরচ হয় তাহলে আমি বহন করতে পারাবো আর টাকা বেশি লাগলে আমার পক্ষে বহন করা সম্ভব হবেনা। আমি কৃষক মানুষ। গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিকালে টংঙ্গীবাড়ী প্রেসক্লাবে জামায়াতে ইসলামির অর্থ সহায়তা নিতে এসে এসব কথা বলেন তাওহিদ ও তার বাবা মনির হোসেন।
◑ Chief Adviser-☞ Abu Jafor Ahamed babul ◑ Adviser☞ Mohammad Kamrul Islam
◑Editor & publisher-☞ Mohammad Islam ✪Head office:-Motijheel C/A, Dhaka-1212,
✪Corporate office:-B.B Road ,Chasara, Narayanganj-1400, ✆Tell-02-47650077,02-2244272 Cell:+88-01885-000126
◑web:www.samakalinkagoj.com. ✪For news:(Online & Print)samakalinkagojnews@gmail.com,
✪For advertisements:-ads.samakalinkagoj@gmail.com✪For Editor & publisher:-editorsamakalinkagoj@gmail.com.✆Cell: +8801754-605090(Editor)☞Instagram.com/samakalinkagoj ☞ twitter.com/samakalinkagoj
☞সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক ১৮০,ফকিরাপুল পানির টাংকির গলি,মতিঝিল বা/এ, ঢাকা অবস্থিত 'জননী প্রিন্টার্স' ছাপাখানা হতে মুদ্রিত, ✪ রেজি ডি/এ নং-৬৭৭৭
◑ All Rights Reserved ©Daily samakalin kagoj paper authority>(© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ©দৈনিক সমকালীন কাগজ পত্রিকা কর্তৃপক্ষ)
Copyright © 2025 Daily Samakalin Kagoj. All rights reserved.