প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২১, ২০২৪, ৩:৪৮ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৪, ৬:৩৮ পি.এম
মহাভারতের চিত্রনাট্যের জাদুকরী রূপকার ছিলেন উর্দু কবি রাহী মাসুম রেজা
ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা।।
ধর্ম আসলে হচ্ছে মানুষের বাইরের একটি খোলস মাত্র। বিবেক, মনুষ্যত্ব ও মানবিক চেতনা থেকেই প্রকৃত মানুষকে চিনতে হয়। হিন্দু, মুসলীম, শিখ, ইসাহী সকলের শরীরেই বইছে একই রক্ত ধারা।
আমরা আগে বলেছিলাম, হিন্দুদের মহা উৎসব দুর্গা পূজার আগে যে মহালয়ার চণ্ডী পাঠ হয়,সেটি আগে পাঠ করতেন এক মুসলীম ব্যক্তি। তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকা রেডিওতে গিয়ে অংশ গ্রহন করেছিলেন ।
আজ ঠিক তেমন এক প্রথিতযশা মুসলিম ব্যক্তিত্বের কথা বলতে চলেছি।
মহাভারত ধারাবাহিক সিরিয়াল নিয়ে আমরা ভারতবাসী গর্বিত। অথচ অনেকেই জানেন না এই ঐতিহাসিক ধারাবাহিকের চিত্র নাট্যকার একজন মুসলিম উর্দু কবি রাহী মাসুম রেজা।
প্রখ্যাত ফিল্ম নির্মাতা বি আর চোপড়া যখন ক্লাসিক ধারাবাহিক মহাভারত নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন তখন যে বিষয়টি তাঁকে সবচাইতে বেশী চিন্তায় ফেলেছিলো সেটা হলো উপযুক্ত চিত্রনাট্য। কারন এই বিশাল এবং জটিল মহাকাব্যকে গল্পের মোড়কে সাধারন মানুষের কাছে পেশ করতে হলে একটা খুব শক্তিশালী এবং মজবুত চিত্রনাট্যের প্রয়োজন। এমনিতে চিত্রনাট্য লেখার অভাব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নেই কিন্তু মহাভারতের আঠারো পর্বের সব ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষন করে সব চরিত্রের মুখে সংলাপ বসিয়ে চিত্রনাট্য বানানোর মতো সেইরকম পড়াশোনা জানা উপযুক্ত লোক কোথায়? অনেক ভেবে বি আর চোপড়া দেখলেন একজন লোকই এই ভারতবর্ষে আছেন যিনি এই কাজটা নিঁখুতভাবে করতে পারেন। তিনি হলেন বিখ্যাত উর্দু কবি এবং ফিল্ম চিত্রনাট্যকার ডঃ রাহী মাসুম রেজা (ম্যায় তুলসী তেরে আঙ্গন কি, কর্জ এবং ঋষিকেশ মুখার্জীর গোলমাল তাঁর স্মরনীয় কাজগুলির মধ্যে অন্যতম)।
বি আর চোপড়া ডঃ রাহী মাসুম রেজার সাথে যোগাযোগ করলেন। রেজা সাহেব সব শুনে বললেন এতো উত্তম প্রস্তাব কিন্তু সমস্যা হলো আবার নতুন করে পড়াশোনা করতে হবে। প্রচুর ধকল আর খাটুনী আছে। এই বয়সে অত ধকল নিতে পারবো না। আর অন্যান্য ফিল্ম সিরিয়ালের কাজও আছে। সময় বের করা মুশকিল। আপনি অন্য কাউকে দেখুন।
এরপরেই সমস্ত নিউজ পেপারে এই সংবাদ খবর হিসাবে বেরিয়ে গেল যে বি আর চোপড়ার মহাভারতের চিত্রনাট্য লেখার প্রস্তাব ডঃ রাহী মাসুম রেজা প্রত্যাখান করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে কিছু দিনের মধ্যেই চোপড়াদের দফতরে বন্যার মতো চিঠি আসা শুরু হয়ে গেল। উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো লিখলো - একজন মুসলমান ছাড়া মহাভারতের স্ক্রীপ্ট লেখানোর জন্যে আপনি সারা ভারতে আর লোক খুঁজে পাননি? হিন্দুরা কি মরে গেছে? গোঁড়া মুসলীম সংগঠনগুলিও চিঠিতে লিখলো - আপনার সাহস হয় কী করে যে একজন মুসলমানকে গিয়ে মহাভারতের স্ক্রীপ্ট লেখার কথা বলবার?
অত্যন্ত বুদ্ধিমান বি আর চোপড়া সমস্ত চিঠি রেজা সাহেবের ঘরে পাঠিয়ে দিলেন। সমস্ত চিঠির বক্তব্য এবং ভাষা খুঁটিয়ে পড়ার পর রাহী মাসুম রেজা টেলিফোনে চোপড়া সাহেবকে জানালেন তিনি রাজি তবে মহাভারতের চিত্রনাট্য আমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ লিখবে না। আমিই লিখবো কারন আমিও গঙ্গাপুত্র ( রেজা সাহেব উত্তর প্রদেশের গঙ্গা তীরস্থ গাজীপুরে জন্মগ্রহন করেছিলেন)।
চিত্রনাট্য লেখার পরে যখন সিরিয়ালের সম্প্রচার শুরু হলো তখন প্রশংসার বন্যায় ভেসে গেলেন ডঃ রাহী মাসুম রেজা। অধিকাংশ চিঠিতেই তার পান্ডিত্যের প্রশংসা এবং দীর্ঘজীবনের কামনা ছিলো। মহাভারতের যে অসাধারন সম্বোধনগুলো ভীষন জনপ্রিয় হয়েছিল যেমন - মাতাশ্রী, পিতাশ্রী , ভ্রাতাশ্রী , তাতশ্রী এই শ্রী যুক্ত সম্বোধনগুলো আগে কোন ধার্মিক কাহিনীতে ব্যবহৃত হয়নি। এটা ডঃ রাহী মাসুম রেজার এক স্মরণীয় কীর্তি।
কি অনবদ্য সংলাপ আর টানটান চিত্রনাট্য ছিল!! কত সুন্দরভাবে মহাভারতএর জটিল জায়গা গুলোকে তুলে ধরেছিলেন। কোথায় সংস্কৃত শব্দ ব্যাবহার করতে হবে আবার কোথায় হিন্দি শব্দ ব্যবহার করতে হবে তারও এক দুরন্ত নমুনা পেশ করেছিলেন রেজা সাহেব। কুন্তী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নাজনীন, আর অর্জুনের চরিত্রে ফিরোজ খান। সামসুদ্দীন হয়েছিলেন বকাসুর। এটাই বুঝি প্রকৃত ভারতবর্ষ ।
রেজা সাহেব সমস্ত চিঠিগুলোকে বান্ডিল করে বেঁধে রাখতেন। এই রকম অনেক বড় বড় চিঠির বান্ডিল ওনার ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে রাখা থাকতো। একদিন এক সাংবাদিক যিনি রেজা সাহেবের কাছে সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন, তিনি একদম আলদা করে ঘরের কোনায় রাখা একটা ছোট্ট চিঠির বান্ডিলের দিকে অঙ্গুলী নির্দেশ করে রেজা সাহেবকে প্রশ্ন করলেন - এই ছোটো চিঠির বান্ডিলটা আপনি আলাদা করে রেখেছেন কেন?
- ওটা স্পেশাল বান্ডিল। উত্তর দিলেন রেজা সাহেব।
- স্পেশাল কেন? কি আছে ওতে? -
- ওটাতে উগ্র হিন্দু এবং মুসলীম সংগঠনগুলোর তরফ থেকে মহাভারতের চিত্রনাট্য লেখার জন্যে আমাকে হুমকি ও গালাগাল দেওয়া হয়েছে। তাই আলাদা করে রেখেছি।
তারপরে রেজা সাহেব বললেন - এত বড় বড় বান্ডিলের মধ্যে এই গালাগাল এবং হুমকি চিঠির ছোটো বান্ডিলটা দেখে তিনি প্রেরনা পান এবং এটা ভেবে উৎসাহিত হন যে আমাদের দেশে নোংরা চিন্তা করা মানুষের সংখ্যাটা কাম নয় তবে শুভচিন্তা করা মানুষের তুলনায় অনেক অনেক কম।
এই ঘটনা কিন্তু আজও আমাদের একটা শিক্ষা দেয় যে এখনো চারদিকে যারা সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াচ্ছে তাদের তুলনায় শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের সংখ্যাটা এখনো অনেক অনেক বেশী। সেই জন্যেই দুনিয়া এখনো চলছে।
ডঃ রাহী মাসুম রেজা একটি ইন্টারভিউতে বলেছিলেন যে - আমার স্বধর্মের লোকেরা আমাকে বলে ও মুসলমান নয়। আবার অন্য ধর্মের লোকেরা বলে ওতো মুসলিম। কিন্তু আমার কাছে কেউ জানতে চাইলো না যে প্রকৃত আমি কি!
আজ যখন যেখানে সেখানে কথায় কথায় হিন্দু মুসলিম নিয়ে ঝগড়া হয়,দাঙ্গা হয়,তখন রেজা সাহেবের মহান কীর্তির কথা মনে পড়ে। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন সংকল্প থাকলে, মন স্বচ্ছ থাকলে ধর্ম কখনো মহৎ কাজের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
Editor & Publisher-MSI
Head office:-Motijheel C/A, Dhaka-1212,
Corporate office:-B.B Road ,Chasara, Narayanganj-1400, Tell-02-47650077,02-2244272 Cell:+88-01885-000124,01885-000126
web:www.samakalinkagoj.com. For news:(Online & Print)
samakalinkagojnews@gmail.com, news.samakalinkagoj@gmail.com
For advertisements:-ads.samakalinkagoj@gmail.com
For publisher & editor:-editorsamakalinkagoj@gmail.com. Cell: +8801754-605090(Editor)
☞Instagram.com/samakalinkagoj ☞ twitter.com/samakalinkagoj
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক ১৮০,ফকিরাপুল পানির টাংকির গলি,মতিঝিল বা/এ, ঢাকা অবস্থিত 'জননী প্রিন্টার্স' ছাপাখানা হতে মুদ্রিত, ✪ রেজি ডি/এ নং-৬৭৭৭
© All Rights Reserved ©Daily samakalin kagoj paper authority>(© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ©দৈনিক সমকালীন কাগজ পত্রিকা কর্তৃপক্ষ)
Copyright © 2024 Samakalin Kagoj. All rights reserved.