সকল কর্মকর্তাই যে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কাজ করছেন, এমনটি নয়। অনেকেই বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতেও বেশ গুরুত্বতার সাথে কাজ করছে..!
অনলাইন ডেস্ক।।
বিগত শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) এখনো স্বপদে তরিয়ৎ ভাবে বহাল রয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে রয়েছে নানান ধরনের অভিযোগ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনাও রয়েছে কিছু কিছু ডিসির প্রত্যক্ষ মদতে, যারা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের কর্মী অথবা সরকারের বিভিন্ন সময়ে সুবিধাভোগী।
ইতোমধ্যে ক্ক্ষমতার রদবদলের সাথে সাথেই আবার অনেকেই বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এই সকল জেলা প্রশাসকরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পলাতক আ'লীগ শেখ হাসিনা সরকারের এমপি ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রাখছেন এমন তথ্যও জানিয়েছেন।
জেলাগুলোতে ছাত্র-জনতা প্রতিবিপ্লব ঠেকাতে কী ধরনের প্রস্তুতি রেখেছেন এবং পদক্ষেপ নিচ্ছেন তাও জানিয়ে দিচ্ছেন। এতে করে ওই সকল জেলাগুলোতে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বরতদের অনেকেই এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের কোনো না কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মূলত মন্ত্রীদের সুপারিশেই ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তারা। ফলে সেই 'দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেও তারা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নানাভাবে সহায়তা করছেন বলে সূত্র বলছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ১৬ বছরে জেলা প্রশাসক নিয়োগের প্রধান যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে প্রার্থীর রাজনৈতিক মতাদর্শ। ছাত্রজীবনে যারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন তাদেরকেই জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগের জন্য বিবেচনা করা হয়েছে। প্রার্থীদের রাজনৈতিক মতাদর্শ কয়েক স্তরে তদন্ত করা হয়েছে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা, ডিজিএফআই-এনএসআই ছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের(ইউএনও) দিয়ে প্রার্থীর রাজনৈতিক মতাদর্শ যাচাই-বাছাই করা হয়। এরপর তাদেরকে জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
আরও জানা গেছে, দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ কৃষি কলেজ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্রলীগের একসময়কার সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের ভূঁঞা বর্তমানে নাটোরের জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে সবসময় তটস্থ রাখতেন অফিসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তার বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ এলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সব ধামাচাপা দিয়েছেন।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫ ব্যাচের এই কর্মকর্তা এর আগে সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। নাটোরে দায়িত্ব পালনের সময় বিগত সরকারের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সবার সঙ্গে রাজনৈতিক নেতার মতো আচরণ করেছেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের পতনের পরের দিন দুপুরে বিএনপি, জামায়াতের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন।
আবু নাছের ভূঁঞা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের আস্থাভাজন কর্মকর্তারা এখনো তরিয়ত ভাবে কাজ করছেন।
মাগুরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ। বিসিএস ২৫ ব্যাচের এই কর্মকর্তা বিয়ে করেছেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের মেয়েকে। জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়নের আগে তিনি সাধন চন্দ্রের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেছেন।এছাড়াও সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে সাভারের উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এই কর্মকর্তা।
ঢাকার জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান। বিসিএস ২৪ ব্যাচের এই কর্মকর্তার বাড়ি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ এলাকায় হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি। এরপর গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ উইং নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগে (এপিডি) কাজও করেছেন তিনি।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম। বিসিএস ২৭ ব্যাচের এই কর্মকর্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন। রূপগঞ্জের ইউএনও থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ায় কোনো অভিযোগই আলোর মুখ দেখেনি।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন এই কর্মকর্তা ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৭ ব্যাচের এই কর্মকর্তা কলেজজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন ।পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের পতনের পরের দিন সকালে ঘোল পাল্টে বিএনপি, জামায়াত সহ অন্যান্য দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন।নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে এবারই প্রথম কাউকে ডিসি পদন্নোতি দিয়ে পাঠানো হলো।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজা।তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক। তার বাবা গাইবান্ধার জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের একান্ত সচিব (পিএস) মু. আসাদুজ্জামান পাবনার জেলা প্রশাসক এবং দেওয়ান মাহবুবুর রহমান নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান ছিলেন জননিরাপত্তা সচিবের একান্ত সচিব। বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সাবেক এই একান্ত সচিব দায়িত্ব পালন করেছেন হল শাখার বিভিন্ন পদেও।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জেলা প্রশাসক হওয়ার আগে সাবেক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের একান্ত সচিব ছিলেন।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার কলি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের একান্ত সচিব ছিলেন নওগার জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ছিলেন সাবেক মুখ্যসচিব আহমেদ কায়কাউসের একান্ত সচিব।
খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন ছিলেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের একান্ত সচিব। এর আগে তিনি নীলফামারীরও জেলা প্রশাসক ছিলেন।
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত আছেন কাজী নাহিদ রসুল, যিনি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার রায় দেওয়া ঢাকার সাবেক জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুলের কন্যা।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তা হওয়ায় তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছিল।
জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী। তার পিতা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সভাপতি ও প্রক্টর ছিলেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। ছাত্রজীবনে ২০০১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগ এবং পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার গঠিত কমিটিতে ১ নম্বর সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেছেন।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির ছিলেন সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী আব্দুল মান্নানের একান্ত সচিব।
তবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পিএস হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থাকলেও সব কর্মকর্তাই যে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কাজ করছেন, এমনটি নয়। অনেকেই বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতেও বেশ গুরুত্বতার সাথে কাজ করছে বলে জানান গেছে।
সূত্র :ইত্তে/সংগৃ/শুক্র
Editor & Publisher-MSI
Head office:-Motijheel C/A, Dhaka-1212,
Corporate office:-B.B Road ,Chasara, Narayanganj-1400, Tell-02-47650077,02-2244272 Cell:+88-01885-000124,01885-000126
web:www.samakalinkagoj.com. For news:(Online & Print)
samakalinkagojnews@gmail.com, news.samakalinkagoj@gmail.com
For advertisements:-ads.samakalinkagoj@gmail.com
For publisher & editor:-editorsamakalinkagoj@gmail.com. Cell: +8801754-605090(Editor)
☞Instagram.com/samakalinkagoj ☞ twitter.com/samakalinkagoj
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক ১৮০,ফকিরাপুল পানির টাংকির গলি,মতিঝিল বা/এ, ঢাকা অবস্থিত 'জননী প্রিন্টার্স' ছাপাখানা হতে মুদ্রিত, ✪ রেজি ডি/এ নং-৬৭৭৭
© All Rights Reserved ©Daily samakalin kagoj paper authority>(© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ©দৈনিক সমকালীন কাগজ পত্রিকা কর্তৃপক্ষ)
Copyright © 2024 Samakalin Kagoj. All rights reserved.