প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২১, ২০২৪, ৪:০০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ১, ২০২৪, ৭:৩০ পি.এম
শাহ্জাহানের তাজমহলের বড় চ্যালেঞ্জ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
ঋতম্ভরা বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা।।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের পর দিল্লির তাজমহল দেখে চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল। অসামান্য সেই স্মৃতি সৌধ দেখে তাদের মনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব ও স্থাপত্য কে টিকিয়ে রাখতে সম্রাট শাহজাহানের সৃষ্ট তাজমহলের অনুকরণে স্মৃতি সৌধ নির্মাণে অগ্রাহ্য জেগে উঠেছিল।
শাহজাহান তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন বেগম মুমতাজ মহলের স্মৃতি রক্ষার স্বার্থে। এজন্য ২০ হাজার শ্রমিক ২০ বছর ধরে পরিশ্রম করে এটি নির্মাণ করেছিল। কিন্তু ইতিহাস বলে, তাজমহল দেখে সম্রাট এতই অভিভূত হয়েছিলেন যে, এমন সৌধ যাতে ভবিষ্যতে অন্য কেউ বানাতে না পারে সেজন্য এই সৌধ নির্মানের কাজে জড়িত ২০ হাজার শ্রমিকের বুড়ো আঙুল কেটে নেওয়া হয়েছিল। ১৯০১ সালে ইংল্যান্ডের মহারানী ভিক্টোরিয়া মারা যাবার পর তৎকালীন ভারতের ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জন ইংল্যান্ডের রাজাকে খুশি করতে তাজমহলের মতো একটি উপযুক্ত স্মৃতি সৌধ নির্মাণের প্রস্তাব দেন। তারপর ১৯০৬ সালে ১ জানুয়ারি প্রিন্স অফ ওয়েলস এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এটি নির্মাণেও ১৫ বছর সময় লেগেছিল। কিন্তু কোন কারিগর বা শ্রমিকের বুড়ো আঙুল কাটতে হয় নি। এখানেই মুঘল ও ব্রিটিশদের মানষিকতার পার্থক্য।ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল বা ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধ পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থিত রাণী ভিক্টোরিয়ার একটি স্মৃতিসৌধ। উল্লেখ্য, ভিক্টোরিয়া ভারতসম্রাজ্ঞী উপাধির অধিকারী ছিলেন। আগাগোড়া শ্বেত পাথরের তৈরি ইংল্যান্ডেশ্বরী মহারানি ভিক্টোরিয়ার নামাঙ্কিত এই স্মৃতিসৌধটি বর্তমানে একটি জাতীয় প্রদর্শনীশালা জাদুঘর এবং কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণ।বেলফাস্ট সিটি হলের স্থাপত্যশৈলীর আদলে ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধের নকশা প্রস্তুত করেন স্যার উইলিয়াম এমারসন। প্রথমে তাকে ইতালীয় রেনেসাঁ স্থাপত্যশৈলীতে স্মৃতিসৌধের নকশা প্রস্তুত করতে বলা হলেও, তিনি শুধুমাত্র ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর প্রয়োগের বিরোধিতা করেন এবং ইন্দো-সারাসেনিক শৈলীর সঙ্গে মুঘল উপাদান যুক্ত করে মূল সৌধের নকশা প্রস্তুত করেন। ভিনসেন্ট এসচ ছিলেন এই সৌধের অধীক্ষক স্থপতি। সৌধ-সংলগ্ন বাগানটির নকশা প্রস্তুত করেছিলেন লর্ড রেডেসডেল ও স্যার জন প্রেইন। কলকাতার মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানি সংস্থার ওপর নির্মাণকার্যের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল । ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধের উত্তর দিকে অবস্থিত কুইন্স ওয়ে, ডান্সিং ফাউন্টেন, তারপর বিস্তীর্ণ ব্রিগেড প্যারেড ময়দান; দক্ষিণে আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস রোড এবং তারপর সেঠ সুখলাল কারণানি ওরফে পিজি হাসপাতাল; পূর্বে কলকাতার বিখ্যাত সেন্ট পলস্ ক্যাথিড্রাল গির্জা, বিড়লা তারামণ্ডল, আকাদেমি অব ফাইন আর্টস্ এবং রবীন্দ্র সদন; আর পশ্চিমে কলকাতা রেসকোর্স ময়দান। স্মৃতিসোধ ভবনের উত্তর এবং দক্ষিণ দু-দিকেই বিশাল ফটক। উত্তর ফটক থেকে ভবন পর্যন্ত চওড়া রাস্তার দু-দিকে দুই প্রকাণ্ড জলাধার একাধারে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রদর্শনের মনোরম শোভা বর্ধন করে। যে দৃশ্য চাক্ষুষ করে অথবা লেন্সবন্দি করে সব বয়সের প্রেমিকপ্রেমিকা-ই রীতিমতো নস্টালজিক হয়ে যায়! সুরম্য উদ্যান পরিবেষ্টিত বড়ো বড়ো গাছের কাণ্ডের খোপে খোপে অসংখ্য নবীন প্রেমীযুগলের অবস্থানে গোধূলিতে মৌনমুখরতার আবেশ পাওয়া যায় আজো! শ্বেতপাথরে নির্মিত সুবৃহৎ ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধের নির্মাণকার্য শুরু হয় ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে। সৌধটির উদ্বোধন হয় ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে। সৌধের সর্বোচ্চ গম্বুজে বিউগল ধারিনী বিজয়দুতীর একটি কালো ব্রোঞ্জমূর্তি রয়েছে। বায়ুপ্রবাহ শক্তিশালী হলে বল-বিয়ারিং যুক্ত একটি পাদপীঠের উপর স্থাপিত মূর্তিটি হাওয়া মোরগের কাজ করে। আই আই ই এস টি-প্রাক্তনী এ সি মিত্র ভিক্টোরিয়ার নির্মাণপ্রকল্পের কার্যনির্বাহী বাস্তুকার। এক উচ্চ পর্যায়ের পরিবেশ বিজ্ঞানীমহলের অভিমত হল, কলকাতার দূষণের ফলে ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধের সাদা পাথরে মলিনতার ছোঁয়া লাগছে। এই দূষণ থেকে শতাব্দীপ্রাচীন সৌধকে রক্ষা করাটা খুবই জরুরি; কেননা, ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধ কলকাতার গর্বের প্রতীকরূপে বিশ্বের অঙ্গনে প্রতিভাত!
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কলকাতার একটি নিদর্শন। বিপুল মার্বেল কাঠামো ১৯০৬ সাল থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে বিকশিত হয়েছিল। এটি সম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতির প্রতি উৎসর্গীকৃত এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এটি একটি যাদুঘরে রূপান্তরিত হয়েছে।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কোথায়?
কলকাতার ময়দানে কুইন্স ওয়েতে এই স্মৃতিসৌধটি শহরের সবচেয়ে বড় সবুজের উপর অবস্থিত। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ল্যান্ডমার্কের জন্য সঠিক মূল্য অনুমান করা অসম্ভব। লর্ড কার্জন একটি আশ্চর্যজনক এবং নিখুঁত কাঠামো তৈরির প্রস্তাব করেছিলেন, যা সম্পূর্ণ বাগান এবং কোম্পানির জন্য একটি যাদুঘর দিয়ে সম্পন্ন হবে। কার্জনের নিজের বক্তব্য অনুসারে, তিনি একটি ভবন করার প্রস্তাব করেছিলেন যা রাজকীয়, প্রশস্ত, স্মৃতিসৌধ এবং মহৎ হবে, যেখানে কলকাতার প্রতিটি আগন্তুক, আবাসিক জনগোষ্ঠী, ইউরোপীয়রা এবং অন্যান্যরা ভিড় করবে, যেখানে সমস্ত শ্রেণী ইতিহাসের পাঠ শিখবে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল প্রস্থে ৫০০ ফুট, উচ্চতায় ২৮৯ ফুট। প্রিন্স অব ওয়েলস ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ১৯২১ সালে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালটি সাধারণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। কলকাতা থেকে রাজধানী নয়াদিল্লি স্থানান্তর করা হলেও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালটি শেষ পর্যন্ত দেশের প্রাক্তন রাজধানী কলকাতাতেই নির্মিত হয়েছিল। স্মৃতিসৌধটি প্রধানত বেশ কিছু ভারতীয় ব্যক্তি এবং ব্রিটিশ অফিসার দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছিল। লর্ড কার্জনের তহবিল সংগ্রহের আবেদনটি বেশ কয়েকজন রাজনীতিক এবং ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছিল। এটি নির্মাণে মোট খরচ হয়েছিল প্রায় এক কোটি, পাঁচ লক্ষ টাকা । অধিকাংশই এসেছে স্বেচ্ছাসেবী অনুদান থেকে। ১৯০৫ সালে ভারত থেকে লর্ডকার্জনের প্রস্থানের পর স্মৃতিস্তম্ভ বিলম্বিত হতে শুরু করে। অবশেষে ১ ৯২১ সালে ভবনটি খোলা হয়। এই সুপারস্ট্রাকচারের জন্য ১৯১০ সালে কাজ শুরু হয়েছিল এবং ১৯৪৭ সালের পরে এই সুন্দর স্মৃতিসৌধে কিছু সংযোজন করা হয়েছিল।
Editor & Publisher-MSI
Head office:-Motijheel C/A, Dhaka-1212,
Corporate office:-B.B Road ,Chasara, Narayanganj-1400, Tell-02-47650077,02-2244272 Cell:+88-01885-000124,01885-000126
web:www.samakalinkagoj.com. For news:(Online & Print)
samakalinkagojnews@gmail.com, news.samakalinkagoj@gmail.com
For advertisements:-ads.samakalinkagoj@gmail.com
For publisher & editor:-editorsamakalinkagoj@gmail.com. Cell: +8801754-605090(Editor)
☞Instagram.com/samakalinkagoj ☞ twitter.com/samakalinkagoj
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক ১৮০,ফকিরাপুল পানির টাংকির গলি,মতিঝিল বা/এ, ঢাকা অবস্থিত 'জননী প্রিন্টার্স' ছাপাখানা হতে মুদ্রিত, ✪ রেজি ডি/এ নং-৬৭৭৭
© All Rights Reserved ©Daily samakalin kagoj paper authority>(© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ©দৈনিক সমকালীন কাগজ পত্রিকা কর্তৃপক্ষ)
Copyright © 2024 Samakalin Kagoj. All rights reserved.