বাঁ থেকে মিল্টন সমাদ্দার ও তার স্ত্রী মিতু হালদার। ছবি : মিল্টন সমাদ্দারের ফেসবুক থেকে সংগ্রহ
সমকালীন কাগজ ডেস্ক।।
চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী মিতু হালদারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।
বুধবার (১ এপ্রিল) রাত পৌনে ৯টার দিকে ডিবির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসকল তথ্য জানান ডিবি পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন।
ডিবি প্রধান হারুন বলেন, মিল্টন সমাদ্দারকে আজই গ্রেফতার করেছি। তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ রয়েছে। যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে মরদেহ নিয়ে অসঙ্গতি এবং জাল মৃত্যু সনদের অভিযোগটি বেশি গুরুতর মনে হয়েছে। আলোচিত মিল্টন সমাদ্দারকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এ সময় ডিবি প্রধান হারুন জানান, ডিবি কার্যালয়ে বেশ কয়েকজন অভিযোগকারী ইতোমধ্যে অবস্থান করছেন। তারা মিল্টন সমাদ্দারে বিরুদ্ধে মামালা করবেন বলেও জানান তিনি।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি চৌকস দল ঢাকাস্থ মিরপুর থেকে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।

এর আগে গত ২৫ এপ্রিল ‘মানবতার মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ এবং ‘জীবনের ধাপে ধাপে প্রতারণা’ শিরোনামে দুটি সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক পত্রিকায়। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। মুখ খুলতে শুরু করেন ভুক্তভোগীরা অনেকেই। এরপর মাঠে নামেন সকল সাংবাদিক। উঠে আসে তার একের পর এক ভয়ংকর প্রতারণার আর অপকর্মের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিল্টন সমাদ্দারের সেবামূলক কর্মকাণ্ডের রয়েছে ব্যাপক প্রচারণা। যেখানে দেখা যায়, অসহায়-দুস্থ মানুষের সেবায় তিনি গড়ে তুলেছেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের একটি বৃদ্ধাশ্রম। রাস্তা থেকে অসুস্থ ও ভবঘুরেদের কুড়িয়ে ওই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় দেন, করেন সেবা-শুশ্রূষা। জনসেবামূলক এসব কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন সরকারি-বেসরকারি নানা পুরস্কারও।
তবে ভালো কাজ যতটুকু করেছেন, প্রচার করেছেন তার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি।জীবিত মানুষের কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বিক্রির মতো ভয়ংকর জঘন্যতম অপকর্মের পাশাপাশি রয়েছে বহু অভিযোগ।
অনুসন্ধানে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠে এসেছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
মিল্টন সমাদ্দারের দাবি, আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেওয়া হয় না। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার আশ্রমে চিকিৎসার খরচ বাবদ প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়; যা অস্বাভাবিক। আবার আশ্রমে চিকিৎসা না দেওয়ার দাবি করলেও তিনি ডাক্তারদের জন্য ৬০ লাখ টাকার বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন বলেও অভিযোগ আছে।
আশ্রমের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মরদেহ দাফন করা হয়েছে বলে দাবি করেন মিল্টন। এসব মরদেহ রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে দাবি তার।
তবে অনুসন্ধানে উঠে আসে মিল্টনের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সব মিলিয়ে ৫০টি মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ১৫টির মতো মরদেহ দাফনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু আজিমপুর কবরস্থানে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহের দাফন হয়নি। তবে মিল্টন সমাদ্দারের দাবি অনুযায়ী ৯০০ মরদেহ দাফন করা হলে বাকি ৮৩৫টি মরদেহ কোথায় দাফন করা হয়েছে, তার কোনো সুদুত্তর পাওয়া যায়নি তার কাছ থেকে। এসব মরদেহ আবার বেশিরভাগ সময় রাতে দাফন করা হয়েছে না রহস্যের জন্ম দিয়েছে। তাছাড়া দাফন করা মৃতদেহের পেটে আবার কাঁটাছেঁড়ার দাগ থাকার অভিযোগও রয়েছে।
আশ্রমে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের ডেথ সার্টিফিকেট মিল্টন নিজেই তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ আছে। ডাক্তারের সীল-সাক্ষর জাল করে এসব করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে। আবার মৃতদেহের শরীরে কাঁটাছেঁড়ার দাগ থাকার বিষয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন তুললে বিনামূল্যে সেখানে গোসল (মৃতদের) করানো বাদ দেন মিল্টন। পরে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে খরচ করে আশ্রমের মধ্যে মৃতদেহ গোসল করানো হতো বলে জানা গেছে।
মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমে এক বৃদ্ধকে রেখে আসেন মিরপুরের দারুস সালাম থানার বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি রনি মল্লিক। তবে সেই বৃদ্ধের ভাগ্যে কী ঘটেছিল সেই উত্তর পাননি রনি মল্লিক। রনির অভিযোগ, বৃদ্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে উল্টো আমাকে নির্যাতন করা হয়। তার ধারণা বৃদ্ধকে হয়তো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
মিল্টন সমাদ্দার হোমকেয়ার নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আয় করে ৬৬ লাখ টাকা বৃদ্ধাশ্রমে দান করেছেন বলে সাক্ষাতকার দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে তার হোমকেয়ারের কোনো সার্ভিস নেই। শুধু লাইসেন্স আছে। এছাড়া তিনি সব সময় দুটি আশ্রমের কথা বলে এসেছেন। তবে একটি আশ্রমের তথ্য সব সময় গোপন রেখে এসেছেন অভিযোগ আছে।
এছাড়া আশ্রমে চর্টার সেল বানিয়ে মানুষকে নির্যাতন, বরিশালে চার্চ দখল করতে মন্ত্রণালয়ের নামে ভুয়া চিঠি তৈরি, চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, শিশু পাচার বা বিক্রি, সাঈদী, মামুনুল হকের মতো লোকদের মুক্তির মিথ্যা প্রচারণা ইত্যাদি নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক কোটি ষাট লাখের বেশি ভিউয়ার রয়েছে মিল্টন সমাদ্দারের। অভিযোগ রয়েছে এই বিশাল অনুসারীদের কাজে লাগিয়ে তার মূল টার্গেট ছিল বিভিন্ন মানবিক কাজ প্রচার করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা।
✪ Chief Adviser, Prabir Kumar Saha, ✪ Chief Advisor, Masuduzzaman Masud ✪ Adviser- Mohammad Kamrul Islam, ✪Editor & publisher- Mohammad Islam.☞Head office:-Motijheel C/A, Dhaka-1212, Corporate office:-B.B Road ,Chasara,Narayanganj-1400,✆-02-47650077,02-2244272 Cell:+88-01885-000126.web: www.samakalinkagoj.com, News-samakalinkagoj@gmail.com,✆+8801754-605090(Editor) সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক ১৮০,ফকিরাপুল পানির টাংকির গলি,মতিঝিল বা/এ, ঢাকা অবস্থিত 'জননী প্রিন্টার্স' ছাপাখানা হতে মুদ্রিত,®রেজি ডি/এ নং-৬৭৭৭, All Rights Reserved ©Daily samakalin kagoj paper authority সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ©দৈনিক সমকালীন কাগজ পত্রিকা কর্তৃপক্ষ।
Copyright © 2025 Samakalin Kagoj. All rights reserved.